দেশের খবর: দেশজুড়ে এখন ভোটের হাওয়া। সরগরম হয়ে উঠেছে জনপদগুলো। দশ বছর পর বিএনপি এবার নেমেছে নির্বাচনে। ফলে মাঠের পরিবেশের দৃশ্যপটটা ভিন্নমাত্রায় উত্কীর্ণ। তবে তাদের নেতা-কর্মীরা ভুগছেন গ্রেফতার আর মামলা আতংকে। পুরানো ও নতুন মামলায় সারাদেশে গ্রেফতার চলছে। গতকালও গ্রেফতার হয়েছেন অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে ধানের শীষের ৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থীসহ গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় ১১ শত। নতুন মামলা হয়েছে ৫২৫টি। গুমের পর খুন হয়েছেন কেশবপুরের একজন জনপ্রিয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে অনেক প্রার্থী এলাকায় যেতে পারছেন না। তারা প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্ব স্ব জেলার রিটার্নিং অফিসারের দফতরে। যারা এলাকায় গিয়েছেন তাদের অধিকাংশই পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন।
দলের মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তায় বিএনপির বহু নেতা। তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে রয়েছেন। কেউ পুরনো নাশকতা বা দুর্নীতির মামলার দণ্ড নিয়ে কারাগারে। অনেকে উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন সাজা স্থগিতের আশায়। কিন্তু সেখানে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না কেউই। দণ্ড ও সাজা স্থগিতের জন্য উচ্চ আদালতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন সবাই। নিম্ন আদালতে দুই বছরের অধিক দন্ডপ্রাপ্ত কেউই আর উচ্চ আদালতে গিয়ে তা স্থগিত করার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে দলের যেসব নেতা নিম্ন আদালত থেকে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের নির্বাচন করার সকল সম্ভাবনা নিভে গেছে।
আজ চূড়ান্ত বাছাই তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। তাতে দন্ডিত প্রার্থীরা অযোগ্য হয়ে যাবেন। ফলে বিএনপি হারাবে ধানের শীষের অনেক যোগ্য ও পুরনো প্রার্থীদের। ইতিমধ্যে দন্ড স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করে নির্বাচনে অযোগ্য হয়েছেন আমান উল্লাহ আমান, ডা. জাহিদ হোসেনসহ ৬ প্রার্থী। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে বিএনপিতে একদিকে গ্রেফতার আতংক আর অন্যদিকে অনেক যোগ্য প্রার্থীকে পাওয়ার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গতকাল দলের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তফসিলের পর গ্রেফতার ও মামলার তালিকা দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সারাদেশে গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ করা না হলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে সুষ্ঠু পরিবেশের নূন্যতম পরিবেশ নেই। প্রতিদিন গ্রেফতার আর মামলা চলছে সমানতালে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছুই নেই। সাত সম্ভাব্য প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের জামিন হচ্ছে না। বিচারিক আদালত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। সরকারের সাজানো পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন আওয়ামী লীগের দলীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সারাদেশে যেভাবে পুলিশি অভিযানের নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার হয়রানি করা হচ্ছে এ অবস্থা বন্ধ না হলে নির্বাচনের নূন্যতম সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে না। ডিসি, এসপি, ইউএনও ওসিদের বদলি করা হলে কিছুটা হলেও পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এটা করা না হলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হবে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, এখনো আদালত, থানা আর কারাগারেই চক্কর কাটছেন। সারা জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ ও আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগের গুন্ডারা যৌথভাবে হামলা চালাচ্ছে, পুলিশ নেতাকর্মীদেরকে লাগাতার গ্রেফতার ও জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। প্রার্থীরা এলাকায় যেতে পারছেন না। তিনি বলেন, প্রার্থীরা যদি মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে থাকে তাহলে নির্বাচন করবে কিভাবে। এ অবস্থায় কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
রিজভী বলেন, গত বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে ঢাকা-৭ আসনের মোশাররফ হোসেন খোকন নিখোঁজ হন। পুলিশ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়েছে। ধানের শীষ প্রতীকের নরসিংদী-১ আসনের প্রার্থী খায়রুল কবির খোকন ও মাগুরা-১ আসনের বিকল্প প্রার্থী মনোয়ার হোসেনকে পৃথক মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঐক্যফ্রন্টে চূড়ান্ত আসন বন্টন আজ
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত দলগুলো কে কয়টি আসন পাবে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যাবে আজ-কালের মধ্যে। আজ আসন বন্টন চুড়ান্ত করা হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এতথ্য জানিয়ে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন দল কতটি আসন পাবে তা চূড়ান্ত করেছি। তা আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে জানানো হবে। আসনের চূড়ান্ত ঘোষণার পরেই ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার প্রকাশ করা হবে।
এদিকে জোটভুক্ত দলগুলোকে বিএনপির পক্ষ থেকে যতসংখ্যক আসন ছেড়ে দেওয়ার মৌখিক আশ্বাস থেকে দেওয়া হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি কোনো দলই। তারা আরো বেশি আসন চাইছে। এ অবস্থায় আসন বণ্টন নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক অব্যাহত আছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চেয়ে আসন বণ্টন নিয়ে সংকট বেশি নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে।