দেশের খবর: আগামী সপ্তাহে গঠিত হচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভা। এই মন্ত্রিসভায় একঝাঁক নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। নতুন ও পুরনোদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু করবেন। আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের দেশ পরিচালনার প্রধান লক্ষ্য, সরকারকে দল থেকে আলাদা করে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের লক্ষ্যে গণভবনের প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিশ্বস্তদের সঙ্গে আলাপআলোচনা শুরু করেছেন। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম মঙ্গলবার বলেন, গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশ হওয়ার পরই সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। এরপর দ্রুত মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আগেই মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে। জাতীয় পার্টিকে এবারও মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে কি না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিসভার শপথ দ্রুতই শেষ করতে চান। গতকাল ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সাংবিধানিক খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার বিষয়ে মত দেন। ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে বর্তমান সংসদের মেয়াদকাল ও নতুন সংসদের শুরুর বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচন কমিশন গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যদের গেজেট প্রকাশ করেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নতুন এমপিদের শপথবাক্য পাঠ করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। জাতীয় সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নতুন সংসদ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারে কারা থাকছেন, বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্য থেকে কারা বাদ পড়ছেন—সে আলোচনা চলছে এখন সর্বত্র। গণভবন সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনের নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গত পাঁচ বছরের মূল্যায়নে যাঁদের পারফরম্যান্স খারাপ তাঁরা সবাই বাদ পড়বেন। সে ক্ষেত্রে বয়স এবং দলীয় পদ বিবেচনায় নেওয়া হবে না বলে জানা গেছে।
গণভবনসংশ্লিষ্ট সূত্র ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, সম্ভাব্য তারুণ্যনির্ভর মন্ত্রিসভায় ডজনেরও বেশি নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। এবার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হবেন বলে যাঁদের নাম আলোচনায় আছে তাঁরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য, ছাত্রলীগের দুঃসময়ের নেতা এবং ’৭৫ পরবর্তী সংকটকালে জেল-জুলুমের শিকার র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী; কুমিল্লা-৭ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, দিনাজপুর-২ আসন থেকে পর পর তিনবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী; সিলেট-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সিনিয়র সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সদস্য মৃণাল কান্তি দাস, যশোর-৩ আসন থেকে পরপর দুবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য, দীর্ঘ সময় ধরে আবাহনী ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত (পরিচালক) কাজী নাবিল আহমেদ; কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন; ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-১১ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ; সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক নেতা, পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন, টাঙ্গাইল-৭ আসনের সংসদ সদস্য একাব্বার হোসেন, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি; জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ প্রমুখ।
এ ছাড়া মহাজোটের সরকার হলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জিএম কাদের এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ আসনের পরপর তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মনোনীত করার বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল।