স্পোর্টস ডেস্ক: কোচ ওয়াকার ইউনিস বা সিলেট সিক্সার্সের কর্মকর্তারা কেউ এসে পড়েননি তখনো। এমনকি সাংবাদিকদের চেয়ারগুলোও তখনো পুরো ভরে ওঠেনি। এর মধ্যেই তিনি এসে হাজির। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মিডিয়া ম্যানেজারকে বললেন, ‘ওয়াকার কোথায়? হোটেলেও ট্রাফিক নাকি?’ বলে নিজেই হা হা করে হেসে উঠলেন।
সিডনির ট্রাফিক জ্যামের সঙ্গে ঢাকাকে মিলিয়ে গল্প শুরু করলেন। এরপর ইংরেজি হরফে লেখা সিলেট সিক্সার্সের বাংলা স্লোগানটা পড়ে সেটার অর্থ জানতে চাইলেন। মোট কথা, একটু সময়ের মধ্যে একাই মাতিয়ে তুললেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষ। হঠাৎ গেলে বোঝার উপায় নেই, তিনি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় ক্রিকেট তারকা। হ্যা, তিনি ডেভিড ওয়ার্নার।
সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে বিপিএলে হয়ত খেলতে আসা হতো না অস্ট্রেলিয়ান এই সুপার স্টারের। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। মানে, বল টেম্পারিং কাণ্ডে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ বলেই সময়টা কাজে লাগাতে চলে এসেছেন সিলেটের অধিনায়কত্ব করতে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্নার বললেন, এই অধিনায়কত্বটা সামনে থেকেই করতে চান তিনি, ‘আমি এখানে এসেছি সিক্সার্সকে জেতাতে। আমি তাদের দলের একজন। আমাকে অধিনায়ক করা হয়েছে, সেন জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি চাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে। আমার কাজ রান করা। আমি সেটা করতে চাই। সিক্সার্সকে জেতাতে যা করা দরকার, সেটা করতে চাই।’
বাংলাদেশের উইকেটে ওয়ার্নারের জন্য রান করাটা অবশ্য কখনোই সহজ হয় না। তবে এই ওপেনার বলছিলেন, তিনি অভিজ্ঞতা থেকে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় আমি সম্প্রতি যে ক্লাব ক্রিকেট খেলেছি, সেখানে উইকেটও নিচু বাউন্সের ও ধীরগতির ছিল। ফলে এখানে (বাংলাদেশে) মানিয়ে নেওয়া আমার জন্য সহজ হবে। এ ছাড়া আমার ঢাকা ও চট্টগ্রামে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এ ছাড়া আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার। সেই অভিজ্ঞতা আমি কাজে লাগাতে চাই। আশা করি, দ্রুত এখানে মানিয়ে নেব।’
নিষেধাজ্ঞার এই শেষ দিকে এসে ক্রিকেট খেলে বেড়াচ্ছেন দুনিয়া জুড়ে। এর আগে লম্বা সময় ক্রিকেটের বাইরেই থাকতে হয়েছে। ওয়ার্নার বলছিলেন, সেই সময়টাও উপভোগ করেছেন, ‘আমি ভাগ্যবান মানুষ। আমি একটা ভালো পরিবার পেয়েছি। লম্বা সময় ধরে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে আমাকে। এই সময়টা আমি নিজেকে একজন ভালো স্বামী, ভালো বাবা হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছি। এই সময়টা আমার জন্য এই অর্থে বেশ কার্যকর ছিল। এখন তো আবার ক্রিকেট খেলছি। ক্রিকেটের ব্যস্ততায় সময় কেটে যাচ্ছে।’
নিষেধাজ্ঞা আর কয়েক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। হয়ত অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলেও জায়গা হবে ওয়ার্নারের। তিনি অবশ্য ব্যাপারটা নির্বাচকদের হাতে ছাড়ছেন, ‘আমাকে দলে নেওয়া হবে কি না, সেটা নির্বাচকদের ব্যাপার। আমার কাজ রান করা, পারফরম করা। আমি বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি লিগ খেলছি, ক্লাব ক্রিকেট খেলছি। এইসব জায়গায় রান করে যেতে চাই। তারপর আমাকে যোগ্য মনে করলে নির্বাচকরা দলে নেবেন।’ ওয়ার্নারের এই আগমনে একটু ম্লান হয়ে গেল কোচ ওয়াকার ইউনিসের পর্ব। তবে ওয়াকার বললেন, এই ওয়ার্নারদের আসা বিপিএলের বড় হয়ে ওঠার লক্ষণ, ‘বিপিএল দিনকে দিন আরও বড় টুর্নামেন্টে পরিণত হচ্ছে। প্রতিবছর এখানে বড় বড় নাম যুক্ত হচ্ছে। যেমন একজন (ওয়ার্নার) আমার পাশে বসে আছে। এরকম আরও অনেকে অনেক দলের হয়ে খেলছে। আমি গত আসরে মেন্টর ছিলাম। এবার পূর্ণকালীন কোচ হিসেবে এসেছি। বাংলাদেশ সবসময় আমার কাছে খুব ভালোবাসার জায়গা। আমি সময়টা উপভোগ করতে চাই।’