অনলাইন ডেস্ক: এবার ভারত থেকে আতঙ্কে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর ভয়ে ভারত ছাড়ছেন তারা। পালিয়ে আসছেন বাংলাদেশে। প্রায় ১ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইনদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের মুখে রাখাইন থেকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টের পর ওই রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী–পুরুষ। আগে পালিয়ে আসাসহ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি।
গত ৪৭ দিনে ভারত থেকে পালিয়ে ৩০০ রোহিঙ্গা পরিবারের ১ হাজার ৩০০ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত থেকে স্বদেশে (মিয়ানমার) ফেরত পাঠানোর ভয়েই মূলত ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে আসছে এসব রোহিঙ্গা। আজ বৃহস্পতিবার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মো. আবুল কালাম বলেন, গত বছরের মে থেকে কিছু কিছু রোহিঙ্গা ভারত থেকে আসছিল। এর মধ্যে গত ডিসেম্বরের শুরুর দিক থেকে বুধবার পর্যন্ত ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ১ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা এসেছে। কক্সবাজারের উখিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন ট্রানজিট পয়েন্টের আশ্রয়শিবিরে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে তাদের রাখা হয়েছে। তাঁরা চিঠি দিয়ে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করছেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার কুতুপালং রাবার বাগানের অন্তর্বর্তীকালীন আশ্রয়শিবিরে আসা রোহিঙ্গাদের সবার কাছে ইউএনএইচসিআর ভারত শাখার কার্ড আছে। কার্ডে তাদের শরণার্থী নম্বরও রয়েছে। ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে দুই দফায় স্বদেশে ফেরত পাঠায় ভারত সরকার।
ভারত থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং পুঠিবনিয়া শিবিরে আশ্রয় নেওয়া পাঁচ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবারের কর্তা নুর আলম ও তাঁর স্ত্রী সানজিদা বেগম বলেন, তাঁরা ১০-১২ বছর আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের কেরাইনটেলায় ছিলেন। সম্প্রতি ভারত কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায়। ফলে সেখানকার রোহিঙ্গারা আতঙ্কে ভারত ছেড়ে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।
এই দম্পতি বলেন, রাখাইনে তাঁদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির (বিচ্ছিন্নতাবাদী রাখাইন বৌদ্ধদের সংগঠন) সংঘাত চলছে বলে জেনেছেন। এ অবস্থায় দেশে ফেরত পাঠানো হবে—এই ভয়ে বাধ্য হয়ে তাঁরা বাংলাদেশে এসেছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আটক করে পুলিশ কক্সবাজারে পাঠাচ্ছে। পরে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কাছে তাদের তুলে দেওয়া হচ্ছে।
ভারতে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে বলে জানা গেছে।