দেশের খবর: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা নিয়ে নেপাল সরকার ঘটিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশি তদন্তকারী ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ।
তিনি বলেছেন, এ রিপোর্ট ভিত্তিহীন। ককপিটে বসে পাইলটের ধুমপান দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল না। বরং ক্যাপ্টেনের ল্যান্ডিংয়ের প্রস্তুতিকালে নেপাল কন্ট্রোল টাওয়ারের সতর্কতার ঘাটতি ছিল। তাদের আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল।
সোমবার নেপালের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এর আগে নেপালের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছিল দুর্ঘটনাগ্রস্থ উড়োজাহাজটি সম্পুর্ণ ত্রুটিমুক্ত ও এয়ারওয়ার্দি ছিল।
ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ বলেন, নেপালের তদন্তে বলা হচ্ছে পাইলট ককপিটে বসে ধূমপান করছিলেন। দুর্ঘটনার আগে ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ অবস্থায় ছিলেন ফ্লাইটে থাকা মূল পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান। ঘটনার সময় পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি ‘সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
তার মতে নেপাল তদন্ত কমিটির এই তথ্য সঠিক নয়। পাইলটের ধুমপান নিয়ে বিতর্কেরও কিছু নেই। কারণ, এয়ারক্রাফটে ধূমপান না করার আন্তর্জাতিকভাবে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে টয়লেটে ধূমপান না করার জন্য নির্দেশনা থাকে। সুতরাং এটি দুর্ঘটনার কোনো কারণ নয়।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনাগ্রস্থ উড়োজাহাজের ককপিটে কোন সিসি টিভি ছিল না। কাজেই তদন্ত কমিশন কিভাবে জানতে পারলো পাইলট ধুমপান করেছিলেন ?
সংবাদ সম্মেলনে পাইলট আবিদ সুলতানাকে দায়ী করে ভারত ও নেপালের তদন্ত প্রতিবেদনকে মুলত ‘ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়েছেন তদন্তদলের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশি তদন্তকারী ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ। ক্যাপ্টেনের ল্যান্ডিংয়ের প্রস্তুতিকালে কন্ট্রোল টাওয়ারের আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল।
তদন্ত দলে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে থাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট অপারেশন কনসালটেন্ট সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ বলেন, তদন্ত রিপোর্টে এটিসি (বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ) সম্পর্কে কিছু তথ্য এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা তাদের কিছু প্রস্তাব দেব। সেগুলো রিপোর্টে যুক্ত না করা হলে আমরা আইকাওকে (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন) অভিযোগ করবো।
গত বছরের ১২ মার্চ ৭১ জন আরোহী নিয়ে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস২১১ ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত ৫১ জনের মধ্যে ২২ জন নেপালি ও একজন চীনা নাগরিক ছিলেন, অন্যরা সবাই বাংলাদেশি।
সোমবার ভারতের নয়াদিলিভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (এএনআই) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত কমিশন গত রোববার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেছে।
এর আগেও তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই গেল বছরের আগস্টের শেষ দিকে নেপালি গণমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট এক প্রতিবেদনে একইভাবে দায় চাপানো হয়েছিল আবিদের ওপর।
কাঠমান্ডু পোস্টের ওই প্রতিবেদনে তখন উদ্বেগও জানিয়েছিল নেপালের তদন্ত কমিশন। বলা হয়েছিল নেপাল পোস্টের রিপোর্টের সঙ্গে তাদের চুড়ান্ত প্রতিবেদনের কোন মিল নেই। অথচ পাঁচ মাসের মাথায়ই ভিত্তিহীন ওই প্রতিবেদনের সুরেই কথা বলছে তদন্ত কমিশন।
ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন বলেন, কাজেই এই রিপোর্ট ভিত্তিহীন। এই রিপোর্ট নিয়ে তারা আন্তজাতিক সিভিল এভিয়েশনের কাছে অভিযোগ জানাবেন বলেও জানান।