রংপুরের আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনা হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ভৌমিককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ রায় দেন।
এর আগে আসামি স্নিগ্ধাকে রংপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
রথীশ ছিলেন জাপানি নাগরিক হোশিও কুনি হত্যা মামলার বিশেষ পিপি, আওয়ামী লীগ রংপুর জেলা কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রংপুরের সভাপতি, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলা সাধারণ সম্পাদক।
গত বছরের ২৯ মার্চ রংপুরের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ ওঠে স্ত্রী স্নিগ্ধা ও তাঁর কথিত প্রেমিক কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। হত্যার পর লাশ গুম করে রাখা হয়। তিন দিন পর ৩১ মার্চ রাতে রথীশ চন্দ্রের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আলোচিত এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক বাদী হয়ে স্নিগ্ধা ও কামরুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে স্নিগ্ধা ভৌমিক তাঁর স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
গত বছরের ২১ অক্টোবর এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। ৩০ অক্টোবর থেকে এই হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। হত্যা মামলায় ৩৭ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক সম্পন্ন করা হয়।
এ মামলার প্রধান আসামিসহ দুই আসামি এরই মধ্যে কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম গত বছর ১০ নভেম্বর ও অপর আসামি নিহত আইনজীবীর সহকারী মিলন মোহন্ত গত বছর ১৩ এপ্রিল কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
রায়ের পর নিহতের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই রায়ে আমরা আনন্দিত হলেও আমরা আমাদের ভাইকে আর ফিরে পাব না। এটাই আমাদের সবচেয়ে কষ্ট। রায়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু আমরা দাদাকে আর পাব না। এ জন্য আমরা পারিবারিকভাবে একদম মর্মাহত।’
রায় ঘোষণা শেষে রংপুর জজকোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে, অন্যের প্ররোচণায়, অন্যের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে এই বাবু সোনাকে নৃশংসভাবে পরিকল্পিত হত্যার জন্য বিজ্ঞ আদালত আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই রায় যুক্তিযুক্ত, ন্যায়ত এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’