ডেস্ক রিপোর্ট: ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়ছে। এই সময় নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। কেননা এই বিসিএসে চার লাখের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন, যা পিএসসির ইতিহাসে রেকর্ড। কেমন হবে এই বিসিএসের প্রস্তুতি, তা জানাচ্ছেন ৩৭তম বিসিএসে প্রশাসনে প্রথম স্থান অধিকারী তকী ফয়সাল। এবারের বিষয় বাংলা ও ইংরেজি।
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথপরিক্রমায় প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। ২ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠেয় ২০০ নম্বরের এই এমসিকিউ টাইপ পরীক্ষার সিলেবাসে ১০টি বিষয় ও সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ মান বণ্টনসহ উল্লেখ আছে। তবে মনে রাখতে হবে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় শুধু পাস নম্বর তোলাই মূল লক্ষ্য; এতে সবকিছু পারার ও উত্তর করার চেষ্টা করা নিতান্তই অমূলক। তাই বিক্ষিপ্তভাবে পড়াশোনা না করে সিলেবাস অনুযায়ী পরিকল্পনামাফিক কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতির শুরুতেই সিলেবাসের বিষয়াবলি অনুযায়ী বিগত বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতার দিকগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এরপর নিজস্ব কৌশল অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হবে। কোনো বিষয়ে দুর্বলতা থাকলে সেটাতে বিশেষ জোর দিতে হবে। কঠোর অধ্যবসায় ও নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে যেকোনো বিষয়েই দক্ষতা অর্জন সম্ভব। কোনো পরিস্থিতিতেই হতাশ হলে চলবে না; বরং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রস্তুতি নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে সাফল্য আসবেই।
বাংলা
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রথমেই
আসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় এ অংশের পূর্ণমান ৩৫। এর
মধ্যে সাহিত্যে ২০ এবং ভাষা তথা ব্যাকরণ অংশে ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে।
সাহিত্য অংশের ২০ নম্বরের মধ্যে ০৫ নম্বর প্রাচীন ও মধ্যযুগ এবং ১৫ নম্বর
আধুনিক যুগের সাহিত্য থেকে আসে। এ অংশের প্রস্তুতির জন্য বাংলা সাহিত্যের
ইতিহাসবিষয়ক কোনো বই পড়তে পারলে ভালো হয়। তবে সময়স্বল্পতা ও মনে রাখার
ক্ষেত্রে তা অনেকের জন্যই দুষ্কর। তাই বাজারের যেকোনো গাইড বই থেকে এ অংশ
ভালোভাবে মুখস্থ করতে হবে। আর কিছুদিন পর পর রিভিশন করতে হবে; কারণ এ অংশ
পড়ার চেয়ে ভোলা বেশি সহজ। সঙ্গে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে
কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্য কর্মগুলোর নাম পড়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে যেসব
কবি-সাহিত্যিকদের ওপর সচরাচর বেশি প্রশ্ন আসে (যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,
কাজী নজরুল ইসলাম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত,
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মীর মশাররফ হোসেন, বেগম রোকেয়া, দীনবন্ধু
মিত্র, জসীমউদদীন, কায়কোবাদ প্রমুখ), তাঁদের সাহিত্যকর্মের ব্যাপারে বিশেষ
জোর দিতে হবে। সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকদের ক্ষেত্রেও একই কৌশল প্রযোজ্য।
ব্যাকরণ অংশের সিলেবাসে প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, বানান ও বাক্য শুদ্ধি, পরিভাষা,
সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, ধ্বনি, বর্ণ, শব্দ, পদ, বাক্য, প্রত্যয়, সন্ধি
ও সমাস অন্তর্ভুক্ত আছে। এগুলোর জন্য নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বোর্ড বই
থেকে বিষয় ধরে ভালোভাবে পড়তে হবে। প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, বানান ও বাক্য শুদ্ধি,
বাক্য পরিবর্তন, শব্দ গঠন—এ টপিকস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসেও অন্তর্ভুক্ত।
তাই এগুলো উচ্চ মাধ্যমিকের কোনো ব্যাকরণ বই থেকে পড়তে পারলে আরও ভালো। তবে
অন্ততপক্ষে নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বইটা অবশ্যই পড়া উচিত ; সঙ্গে কোনো গাইড
থেকে বিগত বছরের বিভিন্ন প্রশ্ন (বিশেষত প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার)
ভালোভাবে সমাধান করতে হবে।
ইংরেজি
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ৩৫ নম্বরের মধ্যে
সাহিত্যে ১৫ এবং ভাষা তথা গ্রামার অংশে ২০ নম্বর বণ্টিত আছে। সাহিত্যের
জন্য কোনো একটা গাইড বই থেকে বিগত সালের প্রশ্নের আলোকে দাগিয়ে পড়তে হবে।
যেসব বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন হয়, যেমন- শেকসপিয়ার, রোমান্টিক যুগের কবি,
বিভিন্ন যুগের বিস্তারকাল ও সাহিত্যগত বৈশিষ্ট্য, ইংরেজি সাহিত্যের ছন্দ ও
অলংকার, বিভিন্ন বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের পঙ্ক্তি ও উদ্ধৃতি প্রভৃতি খুব
গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে এবং বারবার রিভাইজ করতে হবে। গ্রামারের জন্য যেকোনো
প্রচলিত গ্রামার বই অনুসরণ করা যেতে পারে। পার্টস অব স্পিচ, ক্লসেস, ইডিয়মস
অ্যান্ড ফ্রেজ, সেন্টেন্স অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন্স—সিলেবাসের এ অংশগুলো
রুলস বুঝে বুঝে প্র্যাকটিস করতে হবে। কারেকশন ও ভোকাবুলারির জন্য কোনো গাইড
বই; সঙ্গে পত্রিকা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিবন্ধ পড়া যেতে পারে। এ
ক্ষেত্রে একটা ব্যক্তিগত ডায়েরিতে নিয়মিত অজানা ওয়ার্ড নোট করা যেতে পারে।
ইংরেজি অংশে ভালো করতে বেশি বেশি অনুশীলনের বিকল্প নেই। কোনো একটি গাইড বই
থেকে সিলেবাস অনুযায়ী বিগত বিসিএসের প্রশ্ন, পিএসসির নন-ক্যাডারের প্রশ্ন,
বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি চাকরির প্রশ্ন অবশ্যই বুঝে বুঝে সমাধান করতে হবে।
আর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ইংরেজি অংশের উত্তর করতে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।
কেননা এগুলোতে কনফিউশনে পড়ে অনেক সময় ভুল হয়ে যায়, আর নেগেটিভ মার্কস
গুনতে হয়। তাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকুন আর নির্ভার হয়ে
পরীক্ষার হলে উত্তর করুন। বিশ্বাস রাখুন; ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে আপনার
জন্য।