বিদেশের খবর: ভারতীয় ঋণখেলাপি হীরা ব্যবসায়ী নীরব মোদির জামিন আবেদনের বিরুদ্ধে লন্ডনের আদালতে ভারত সরকারের পক্ষে সওয়াল করছেন ব্যারিস্টার টোবি ক্যাডম্যান। খ্যাতিমান এই আইনজীবী অনেক বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীর হয়ে আন্তর্জাতিক লবিস্ট তথা আইনি পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করছেন।
জামায়াতের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা সুবিদিত। সেই পটভূমিতে কীভাবে টোবি ক্যাডম্যানের মতো জামায়াত-ঘনিষ্ঠ একজন আইনজীবীকে ভারত সরকার কাজে লাগাচ্ছে তা অনেককেই বিস্মিত করেছে।
গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট’স কোর্টে নীরব মোদির জামিনের বিরোধিতা করেন টোবি ক্যাডম্যান। তার যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে চিফ ম্যাজিস্ট্রেট এমা আর্বাথনাট নীরব মোদীর জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন।
২০১১ সালে জামায়াতে ইসলামী লন্ডনে টোবি ক্যাডম্যানকে তাদের পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করে। তখন আওয়ামী লীগ সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে শীর্ষস্থানীয় জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করে। ক্যাডম্যান তখন ‘নাইন বেডফোর্ড রো’ নামে একটি ফার্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তিনি ছিলেন সুপরিচিত।
পরবর্তী কয়েক বছরে টোবি ক্যাডম্যান জামায়াতের হয়ে আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অনেকবার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। জামায়াতের বক্তব্য তুলে ধরেছেন বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনাসভাতেও। বিভিন্ন নিবন্ধ ও ব্লগ লিখেও প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, বাংলাদেশে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে তা একটি ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ ছাড়া কিছুই নয়!
যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের হয়ে বাংলাদেশের আদালতে সওয়াল করতে টোবি ক্যাডম্যান ঢাকায় আসারও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিদেশি আইনজীবীরা বাংলাদেশের কোর্টে সওয়াল করতে পারেন না, এই যুক্তিতে তাকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) সেই টোবি ক্যাডম্যানকেই দেখা গেলো বিলেতের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট’স কোর্টে সওয়াল করতে।
কিন্তু যে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে তা হলো, ব্রিটেনে এত অভিজ্ঞ আইনজীবী থাকতে ভারত সরকার কেন জামায়াত-ঘনিষ্ঠ টোবি ক্যাডম্যানকে বেছে নিলো?
ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওই আইনজীবীর (টোবি ক্যাডম্যান) অতীত নিয়ে আমার অন্তত ভালো করে কিছু জানা নেই। ভালো করে বিষয়টা খোঁজ নিয়েই তারপর মন্তব্য করা সম্ভব!’
সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা আবার বলেন, ‘এমনও হতে পারে যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসই টোবি ক্যাডম্যানকে এই মামলার জন্য বেছে নিয়েছে। এখানে ভারত সরকারের কোনও ভূমিকাই ছিল না।’
তবে ঘটনা হলো, নীরব মোদী মামলায় ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসকে সহায়তা করতে ভারত থেকেও সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেটের (ইডি) একটি যৌথ দলকেও লন্ডনে পাঠানো হয়েছে। মামলায় টোবি ক্যাডম্যানের নিয়োগ নিয়ে তারা কোনও আপত্তি তুলেছিলেন কিনা, সেটা স্পষ্ট নয়।
কিন্তু যে জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতা ভারতের ঘোষিত অবস্থান, সেই জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন আইনজীবীকে ভারতের কাজে লাগানো বাংলাদেশ সরকারকে কি ভালো কোনও কূটনৈতিক বার্তা দেবে? অনেকের মনেই এ প্রশ্ন জেগেছে।