দেশের খবর: ভোর বেলা মেঘলা আকাশ। এরপর দুপুরে ভ্যাপসা গরম। বিকালে আবার মেঘলা আকাশ। সন্ধ্যায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে ধূলিঝড়। পরে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি। তারপর শুরু প্রচণ্ড ঝড়, সঙ্গে কোনো কোনো এলাকায় শিলাবৃষ্টি। বৈশাখের আগেই গতকাল রবিবার রাতে কালবৈশাখীর কবলে পড়েছে রাজধানী। আর তাতে প্রাণ গেছে চারজনের। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবে মারা গেছেন দুজন। এদিকে দিনের বিভিন্ন সময়ে ঢাকার বাইরে চার জেলায় আকস্মিক বজ্রপাতে পাঁচজন মারা গেছেন। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে দুইজন, নেত্রকোনায় একজন, কিশোরগঞ্জে একজন ও সুনামগঞ্জে একজন।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে ঝড় বৃষ্টির সময় বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায়। কোন কোন এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিড়ে যায়। কয়েকটি এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে প্রাইভেটকার, অটোরিকশাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে নিহত হন চারজন। তাঁদের একজন চা দোকানি মো. হানিফ (৪৫) মাথায় ইট পড়ে মারা গেছেন পল্টন মোড়ে। আর মিরপুরের পশ্চিম শেওড়া পাড়ার ভবন থেকে ইট পড়ে মারা গেছেন দুলাল (৪০) নামে এক গাড়িচালক। মিলি ডি কস্তা (৬০) নামের এক নারী গাছের ডাল পড়ে নিহত হয়েছেন সংসদ ভবন এলাকায়। হাসান নামের আরেকজন মাথায় ইট পড়ে নিহত হয়েছেন কদমতলীতে।
আহতদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রবি, ওমর ও মাহফুজ। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের আবাসিক ছাত্র। অন্যরা হলেন- আল আমিন (১৫), আল আমিন (২১), আল আমিন (১৮), ওবায়দুল (১৪), ইবু (১৪), জোনায়েদ (১৫), আব্দুল খালেক (৫০), রাবেয়া (৩০), সাইফুল (৩০), বিল্লাল (৩৫), আবদুল আজিজ (২৮), মর্জিনা (১৮), আজিজ (৫১), মহিদুল (২৫), হোসেন (১৬)। তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছে।
পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে পল্টন মোড়ে চা দোকানি হানিফের মাথায় ইট পড়লে গুরুতর আহত হন তিনি। তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পল্টন মোড়ে একটি বহুতল ভবনের (মল্লিক কমপ্লেক্স) ওপর থেকে বেশ কয়েকটি ইট চা দোকানি হানিফের ওপরে পড়ে। তিনি সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। হানিফের বাড়ি বরিশালের মেহেদীগঞ্জ উপজেলার উলাদিয়া গ্রামে।
পুলিশ জানায়, ঝড়ের সময় সংসদ ভবন এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে মিলি ডি কস্তা নিহত হয়েছেন। তাঁর বাসা মনিপুরি পাড়ায়।
একইদিনে ঝড়ের মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবেও এক নারী ও তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিচয় তাত্ক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ জুবায়ের সাংবাদিকদের বলেন, কেরানীগঞ্জের মাদারীপুর ঘাট দিয়ে কামরাঙ্গীর চরে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি।
অন্যদিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার উত্তর পতনউষার গ্রামের বজ্রপাতে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- ওই গ্রামের দিনমজুর জুনেদ মিয়ার ছয় বছরের শিশুকন্যা সাদিয়া আক্তার ও চার বছরের মুন্নী আক্তার।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক গণমাধ্যমকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। গ্রামবাসীর বরাত দিয়ে তিনি জানান, গতকাল রবিবার সকালে সাদিয়া, মুন্নীসহ তিন শিশু বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। এ সময় বজ্রপাতে দুই শিশু গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে দ্রুত মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে বজ্রপাতে আসর আলী (৬৯) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।
এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল জানান, গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে বাড়ির উঠানে গৃহস্থালীর কাজ করার সময় হঠাৎ বজ্রপাতে নিহত হন বাহাদুরপুর গ্রামের আসর আলী।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় বজ্রপাতে রাব্বি মিয়া (১৮) নামের একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে রোকন মিয়া (২১) নামের আরও একজন।
নিহত রাব্বি মিয়া উপজেলার নয়ানন্দী হাটি গ্রামের কাদির মিয়ার ছেলে।
এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ হাওরে ঘাস কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দেলোয়ার হোসেন নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। নিহত দেলোয়ার হোসেন উপজেলা সদর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের জহর মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে কাশিপুর গ্রামের জহর মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন বাড়ির সামনের কালিকুটা নামক হাওরে নিজেদের গরুর খাবারের জন্য ঘাস কাটতে যান। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে সে গুরুত্বর আহত হয়। পরে বাড়ির লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে দ্রুত জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জামালগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, এই সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে দেশের কোথাও না কোথাও কালবৈশাখী ঝড় হবে। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত আবহাওয়ার এই অবস্থা থাকবে। অবশ্য মাঝখানে চার ও পাঁচ এপ্রিল কিছুটা ভালো থাকতে পারে।