রাজনীতির খবর: বৈশাখ বরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ যে কনসার্টের আয়োজন করেছিল, সংগঠনের অন্তর্কোন্দলে একটি পক্ষ আগের রাতে সেখানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে।
কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ড মোজোর সহযোগিতায় চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখ বরণে ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে এই কনসার্টের আয়োজন করে। এতে জেমস, মিলা, ওয়ারফেজ, আর্টসেল ও ফিড ব্যাকসহ বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের সঙ্গীত পরিবেশনের কথা।
এই আয়োজনের মঞ্চ তৈরিসহ সামগ্রিক প্রস্তুতি গুছিয়ে আনার মধ্যে শনিবার ভোররাতে এক দল গিয়ে মঞ্চ ভাংচুর এবং বিভিন্ন উপকরণে আগুন ধরিয়ে দেয়।
রাত ৩টায় মল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, কনসার্টের মুল মঞ্চ এলোমেলো, পাশে মেলার স্টলগুলো ভাঙচুর ও কিছু স্টলের তাঁবু উল্টে আছে, বেশ কয়েকটি ফ্রিজ ভেঙে পড়ে আছে। এছাড়া ব্যানার-ফেস্টুন ছেঁড়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়, এর কিছু আগুনে পোড়া।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মোজোর মার্কেটিং বিভাগের অপারেশন হেড (ব্র্যান্ড) আজম বিন তারেক বলেন, রাত ১টার পর এই হামলা হয়।
তিনি বলেন, “২০-২৫ জনের একটি দল এসে গণ্ডগোল বাঁধাতে গেলে আমি তাদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করি। এর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আরও ১০০-১৫০ জন এসে আমাকেসহ আমার ওয়ার্কারদের বের করে দেয়। ১০-১২ মিনিটের মধ্যে পুরো জায়গায় ভাঙচুর চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়।”
ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কিছুক্ষণ পর হাজার খানেক নেতা-কর্মী নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসাইন।
আজম বলেন, “তারা আমাকে বলেন, যা হওয়ার হয়েছে, এখন আপনি প্রোগ্রাম রান করার চেষ্টা করেন। এখন আমি লোকজন পাঠিয়ে দিয়েছি বাইরে, যা ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে আসবে আর বাকিগুলো রিকভার করার চেষ্টা করছি।”
আজম মোজোর পক্ষ থেকে এই আয়োজনের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।
ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনও সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায়নি। তবে ২০-২৫ লাখ টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে।
“এখানকার যত ব্রান্ডিং ছিল সব নষ্ট করে দিয়েছে, ৩৪টি ঘর ছিল সব ফেলে দিয়েছে। ছয়টি ঘর পুড়ে ফেলেছে। ২২টি ফ্রিজের মধ্যে ১৭টি ফ্রিজ ভাংচুর করেছে, ১টিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার সৌভাগ্য যে দামি জিনিসগুলো- সাউন্ড সিস্টেম আমি মাত্র গাড়ি থেকে নামিয়েছিলাম। না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হত।”
ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন কিংবা তার অনুসারী কোনো নেতাদের দেখা যায়নি।
ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা বলেন, সংগঠনের এত বড় আয়োজন নিয়ে সভাপতি শোভনকে কিছু জানানো হয়নি।
“আয়োজনকে ঘিরে কোটি টাকারও বেশি বাণিজ্য করেছেন ছাত্রলীগের অন্য তিন শীর্ষ নেতা। এই কারণে শোভনের অনুসারীরা এই অগ্নিকাণ্ড ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়।”
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী এই ঘটনার জন্য সভাপতি শোভনের অনুসারীদের দায়ী করেছেন।
ভোররাতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “তিনি (শোভন) ডাকসু নির্বাচনে পরাজয়ের কারণে ডাকসু ও ছাত্রলীগের আয়োজনে এত বড় প্রোগ্রামকে বানচাল করার জন্য তার (শোভন) অনুসারীদের দ্বারা এসব কাজ ঘটিয়েছেন।”
আয়োজনের বিষয়ে সভাপতি শোভনকে না জানানোর অভিযোগ নিয়ে রাব্বানী বলেন, “প্রোগ্রামটি মূলত ছাত্রলীগ এবং ডাকসুর আয়োজনে করা হচ্ছে। এই প্রোগ্রামের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসাইনকে। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতিকে কমপক্ষে ৮-১০ বার ফোন দিয়েছেন, কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে এসএমএস করে তাকে জানানো হয়।”
এরপর সকাল পর্যন্ত ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনকে একাধিকবার পক্ষ থেকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
রাব্বানী বলেন, তাদের আয়োজনে কোনো ছেদ ঘটছে না, অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়েই হবে।
এদিকে রাতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কিছুক্ষণ পর এ এফ রহমান হলে শোভন সমর্থক কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীর উপর হামলা হয়।
হলের শিক্ষার্থীরা জানান, হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষারের রুমের দরজা ভেঙে ভাংচুর করা হয়। ৩১৩ এবং ৩১৫ নম্বর কক্ষে তালা দেওয়া হয়। এই কক্ষগুলোতে তুষারের অনুসারীরা থাকতেন।
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগকর্মী সাগর রহমানকে মারধর করে তার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শোভনের অনুসারী তুষার বলেন, “ঘটনার সময় আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন। তবে জেনেছি যে সাদ্দাম হোসাইনের নির্দেশনায় হল সংসদের ভিপি আব্দুল আলীম খান নিজে উপস্থিত থেকে আমার কক্ষে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়, অন্য দুটি কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাদ্দামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছই জানি না।”
“এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলে কলটি কেটে দেন তিনি।