ডেস্ক রিপোর্ট : সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভারী যন্ত্রাংশ ক্রয়ের নামে প্রায় ১২ কোটি নয়, ১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় খবর প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। অপর দিকে ৩ চিকিৎসকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সার্ভে কমিটি দেখিয়ে যন্ত্রাংশ বুঝে নেয়ার ঘটনায় উক্ত চিকিৎসকদের অভিযোগের পর ৩ সদস্যের তদন্তটিও গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭দিনের মধ্যে গঠিত টিমকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডাক্তার রফিকুল ইসলাম সোমবার দুপুরে তার অফিসে বসে এসব তথ্য জানান।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতারের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আসাদুজ্জামান, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী ডা. শরিফুল ইসলাম ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. ফরহাদ জামিল সিভিল সার্জন বরাবর তাদের লিখিত অভিযোগে বলেছেন, গত ৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হাসান মাহমুদ এর নেতৃত্ব গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিনে আসলে জানাযায় যে, গত ১৭-১৮ অর্থ বছরে সদর হাসপাতালসহ সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য আনুমানিক ১৩ কোটি টাকার মালামাল ক্রয়ের টেন্ডার কার্যক্রম এবং উক্ত মালামাল বুঝিয়া নেওয়ার জন্য গঠিত সার্ভে কমিটিতে আমাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। অভিযোগে তারা দৃড়ভাবে জানান, এধরণের কোন কার্যক্রমের অফিসিয়াল কাগজপত্রে স্বাক্ষর প্রদান করেননি।
সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগটি ১১ এপ্রিল অফিসিয়ালি হাতে পেয়ে তাৎক্ষণিক ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। গঠিত টিমের ডা. এহেসেন আরাকে সভাপতি করে অপর সদস্যরা হলেন ডা. হাফিজুল্যা ও ডা. জয়ন্ত সরকারকে রাখা হয়েছে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলে বলা হয়।
এদিকে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, বিগত ১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিপুল পরিমান এসব যন্ত্রাংশ ক্রয়ের জন্য একটি টেন্ডার আহবান করা হয়। এরপর বিধিমোতাবেক ১৮ সালের ৮ জুলাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার মার্কেনটাইল ট্রেড কো: সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের ভারী যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। সেখানে মুল্য দেখানো হয় ৮ কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার ৬৮০ টাকা। এরপর উক্ত টেন্ডারের আওতায় বরাদ্দে পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ না হওয়ার খোড়া অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্তি অর্থ বরাদ্দ করা হয় ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। যা ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ২৮ হাজার ৬৮০ টাকা।
জানাগেছে, বরাদ্দ এবং অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়ে প্রায় ১৪ কোটি টাকায় ১২২টি যন্ত্রাংশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সার্ভে কমিটির নিকট বুঝে দেওয়ার কথা ছিল বা দিয়েছেন। তবে সার্ভে কমিটির অভিযোগ তারা এসব ভারী কোন যন্ত্রাংশ বুঝে নেননি বা তারা এই কমিটির সদস্য ছিলেন তাও জানেননা। কাগজপত্রে যারা বিপুল অংকের এসব যন্ত্রাংশ বুঝে নিয়েছেন দেখানো হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বুঝে নেননি বা জানেননা এমন অভিযোগ আসলে এসব মালামাল কোথায় বুঝে দিয়েছেন তা নিয়ে ইতোমধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের স্টোর অফিসার ডা. জয়ন্ত সরকার জানান, বিতর্কিত এই বরাদ্দের কিছু কিছু পণ্য সিভিল সার্জন অফিসের স্টোর কিপার এ কে ফজলুল হক খাতা কলমে গ্রহণ করেছেন। যা তিনি করতে পারেন না। নানা অনিয়মের অভিযোগে দুদকের করা দুটি মামলায় এ কে ফজলুল হক কয়েকবার জেলে গেছেন এবং সেসব মামলা চলমানও রয়েছে। এরপর আবারো অভিযোগ।
তবে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুধু ১৪ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়েই সাংবাদিকরা ব্যস্ত থাকলেও এরআগে ৯ কোটি টাকার আরও একটি ঘাপলার খবর শোনা যাচ্ছে। যা নিয়ে খোজ খবর অব্যাহত আছে।
ডা. তৌহিদুর রহমান ইতোপূর্বে এসব মালামাল ক্রয়ে স্বচ্ছতা রয়েছে এবং বিধিমোতাবেক ক্রয় করা হয়েছে বলে দাবী করেন। তিনি আরও বলেন, সবাইকে তো আর খুশি করা যায়না। চাকরিকালিন কেউ কেউ আমার বিপক্ষে থাকায় আমার অবসরের পর তারা এখন ষড়যন্ত্র করছে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস যেন দুর্নীতির আখড়া!
পূর্ববর্তী পোস্ট