দেশের খবর: আসন্ন বর্ষায় দুর্যোগে পড়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি হলে তার জন্য জাতিসংঘসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো দায়ী থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিছু লোককে ভাসানচরে নিয়ে যেতে চাই। কারণ আগামী বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এতে ভূমিধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। আর প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে আমরা দায়ী থাকবো না। এর জন্য রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে যারা বাধা দিচ্ছে তারাই দায়ী থাকবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে জাতিসংঘের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শক্ত ভাষায় একথা জানিয়ে দেন।
মেঘনা নদীর ভাসানচরে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। তবে জাতিসংঘসহ আরও কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেখানে স্থানান্তরে বাধা দিচ্ছে। আর বাংলাদেশ সরকার আগামী বর্ষায় কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ভূমিধসসহ অন্য কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ার আশঙ্কা করছে।
জাতিসংঘ শরনার্থী সংস্থার হাই কমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অ্যান্টনিও ভিটোরিনো এবং জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকের পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বলেছি আমরা কিছু লোককে ভাসানচরে নিয়ে যেতে চাই। কারণ আগামী বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এসময় ভূমিধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। আর প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে আমরা দায়ী থাকবো না। যারা বাধা দিচ্ছে তারা এর জন্য দায়ী থাকবে।’
‘আমরা জোর করে কাউকে ভাসানচরে নেবো না। তবে যারা যাবে তাদের জন্য একটি ভালো অবস্থান হবে। আমরা নিজের পয়সায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। ওখানে গেলে পরে রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক কাজকর্ম করতে পারবে। মাছ ধরতে পারবে, গরু পালন করতে পারবে।’
‘বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়ে মিয়ানমারে যান’
সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের তিন সংস্থার প্রধানকে বাংলাদেশে কাজ কমিয়ে মিয়ানমারে কাজ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘আমি বলেছি আপনাদের এখানে কাজ নাই, মিয়ানমারে যান। আমি বেশ শক্তভাবে বলেছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ওখানে বেশি জোর দেন, এখানে না। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি আপনারা কতবার সেখানে (মিয়ানমার) গিয়েছেন, সেখানে আপনাদের কতলোক কাজ করে। এখানে এক হাজারের বেশি লোক কাজ করে।’
‘ওখানে বেশি কাজ করেন, এখান থেকে বিদায় হোন। আপনারা মিয়ানমারকে কনভিন্স করেন, যাতে তারা তাদের লোক নিয়ে যায় এবং ওখানে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করেন।’
বিশ্বজনমত তৈরির আহ্বান
রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে ঝামেলা তৈরি করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় জনগণ খুব আপসেট, যে এরা দিনে দিনে ঝামেলার সৃষ্টি করছে। আমরা বলেছি ওদের সংখ্যা এত যে তারা আমাদের বন জঙ্গল সব উজাড় করে দিচ্ছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিন সংস্থার প্রধানকে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বিশ্ব জনমত তৈরির আহ্বান জনান।
মোমেন বলেন, ‘এতবড় সংস্থার প্রধান আপনারা এবং আপনারা বিশ্বব্যপী জনমত তৈরি করতে পারেন। আমার ধারণা, জনমত তৈরি করতে পারলে সবচেয়ে বড় অত্যাচারী শাসকেরও পতন হয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের অপর যে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে ও অপরাধ সংঘটিত করেছে তার দায় তাদের নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
‘যুদ্ধ নয়, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়’
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায় এবং কোনও ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায় না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যা মিয়ানমার তৈরি করেছে, সমাধানও তাদের করতে হবে। আমরা যুদ্ধ করবো না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই। আমাকে কেউ কেউ বলেছে তোমরা যদি চাও তবে আমরা সেখানে কিছু একটা মহড়া করতে পারি।’
এরা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব একটা পাত্তা দেই নাই। তারা বলেছেন, তোমরা চাইলে আমরা তোমাদের হয়ে ক্ষমতা দেখাতে পারি। আমরা বলেছি না, কারণ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই। মিয়ানমার এর আগে লোক নিয়ে গেছে এবং আমরা আশাবাদী।’
উগ্রবাদে ঝুঁকে পড়ার হুঁশিয়ারি
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি সমস্যার দ্রুত সমাধান না করা গেলে রোহিঙ্গা যুবকরা উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। এখানে উগ্রবাদ হলে গোটা অঞ্চলের জন্য খারাপ হবে বলে হুঁশিয়ার করেছি।’
‘এটা হলে মিয়ানমারের দুঃখ আছে। চীনের উদ্দেশ্য সেটা সফল হবে না, অর্থনৈতিক কোনো কাজ হবে না।’
তিন সংস্থার প্রধানকে মন্ত্রী রাখাইনে কারা অস্ত্র সরবরাহ করছে সেটি খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়ে বলেন এর ফলে কে বা কারা এর পেছনে আছে আমরা তা জানতে পারবো।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি রাখাইনে কে বা কারা অস্ত্র সরবরাহ করেছে? ওখানে মারামারি হচ্ছে কে অস্ত্র সরবরাহ করছে আপনারা সেটি বের করেন।’