কে,এম,রেজাউল করিম দেবহাটা ব্যুরো : চলতি মৌসুমে ধান চাষীদের উৎপাদিত ফসল কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় মিল ও ধান ব্যাবসায়ীদের ধান্দাবাজিতে সর্বশান্ত হতে বসে ধান চাষের আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। এতে একদিকে কৃষক দারিদ্র সীমার নিচে নেমে এসে জিম্মি হয়ে পড়ছেন মধ্যসত্তাভোগীদের হাতে। আর টাকার জোরে কৃষকদের টুপি পড়িয়ে কোটিপতি হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও অস্বাধু কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষকেরা এখন ঘুম থেকে জেগে কাস্তেÍ হাতে ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠেছে। তবে পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। শ্রমিক সংকট ও ধানের ভালো দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা। এর মধ্যে কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার মিল ব্যাবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এমনকি তাদের প্রভাবে বাহিরের কোন ব্যবসায়ী এলাকায় প্রবেশ করতে পারছে না বলে জানা গেছে। এমনকি তাদের অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছেন গুদাম, উপজেলা, জেলা কর্মকর্তারা। তাদের সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্করে পথে বসতে বসেছেন কৃষকরা। আর তাই হাইব্রিড (মোটা) ধান বস্তা প্রতি ৭/৮ শত টাকা, ২৮ ধান ১ হাজার থেকে ১০৫০টাকা। যেখানে এখনো পর্যন্ত সরকারি মুল্য ধরা হয়নি বলে জানাগেছে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ভাবে ধান বিক্রয় করতে গেলে সক্রিয় খাদ্য দপ্তরের সিন্ডিকেট নানা হয়রানির শিকার করে সাধারণ চাষিদের। এমনকি ধান বিক্রয় করা টাকা দিতে ৪/৫ মাস ঘুরাতে থাকে। আর এসব কারনে কৃষকরা সরাসরি সরকারকে ধান দিতে না পেরে সরাপন্ন হয় মিলার ও ফড়িয়াদের কাছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৃষকের কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে ধান কিনে গুদাম জাত করা হয়। পরে সুকৌশলে সেগুলো বের করে উচ্চ মূল্যে বিক্রয় করে সরকারি খাদ্য গুদামে। অস্বাধু গুদাম কর্মকর্তাদের জোগসাজসে নি¤œমানের ধান চাল ক্রয় করে সেগুলো পরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিতরন করেন। এ থেকে মোটা অংকের একটি অর্থ জমা হয় উপর মহল থেকে জেলা, উপজেলা, গুদাম কর্মকর্তারদের মাঝে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের নামে ধান-চাল সংগ্রহ দেখিয়ে মিলার দের থেকে সংগ্রহ করা নি¤œ মানের খাদ্য শষ্য গুদমজাত করা হয়। সেই পদ্ধতিতে ঐ শ্রেণির কর্মকর্তাদের ইন্ধনে মধ্যসত্তাভোগী দালালরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করেছে। ফসল উৎপাদনের খরচ ও মাহাজনের টাকা পরিশোদের জন্য কম টাকায় ধান বিক্রয় করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয়র চাষিরা। বিষয়টি চলতে থাকলে কৃষকের ধান চাষের আগ্রহ হারানোর আশাংঙ্কা বিরাজ করছে। এদিকে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা মিলেছে কৃষকদের নানা রকম হাল চাল। আকবর আলী লোকের থেকে ১১ বিঘা জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। এ পর্যন্ত শ্রমীক খরচ বাদে ২১ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছে। উৎপাদন বেশি হলেও ধান বিক্রয় করে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে মনে করছেন তিনি। তাছাড়া শ্রমীক সংকট থকায় উচ্চ মূল্যে গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। আরেক কৃষক তাছের আলী ৫বিঘা জমিতে হাইব্রিড চাষ করেছেন। তার মত আব্দুর রাজ্জাক ৮ বিঘার ৫ বিঘাতে হাইব্রিড ও ৩ বিঘা জমিতে ২৮ ধানের চাষ করেছেন। স্থানীয় মিলার ও ব্যাবসায়ীদের জন্য নায্য দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে সহজে সল্পমূল্যে ও বিনামূল্যে চাল দেওয়ায় বাজারে ক্রেতা নেই বললেও চলে। সে কারনে দাম কম। আর তাতে লোকসানের মুখে কৃষকরা। নুর ইসলাম নামের এক কৃষক জানান, চাতাল ব্যবসায়ীরা আমাদের মত কৃষকের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে। আমরা ধান বা চাল দিতে গেলে সরকারি গুদাম চাল নেয় না। তাই মিলার বা ব্যাসায়ীদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়ছি। সরকার যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান চাল সংগ্রহ করে তাহলে আমরা উপকৃত হব। তবে, এভাবে চলতে থাকলে কৃষকের আতœহত্যা ছাড়া কিছু করার থাকবে না। আমরা ধানের মন প্রতি ১১/১২ শত টাকা দাম নির্ধারণ করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাব। তাহলে আমাদের খরচ কাটিয়ে লাভের মুখ দেখব। পারুলিয়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা দেব প্রসাদ দাস জানান, আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। সরকারি নিয়ম মেনে সব কাজ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার জসিম উদ্দীন জানান, উৎপাদনের জায়গাতে কৃষি বিভাগ আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি ও উন্নত জাতারে ব্যবহার করে ব্যাপক হরে ধান সহ প্রতিটি ফসলের উৎপাাদন বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। বোরো মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে ধানের দাম কম থাকায় কৃষক ক্ষতির মূখে পড়ছে। আমরা বিষয়টি জেনে আমাদের উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহতি করেছি এবং যাতে মাঠ পর্যায়ে সরকারি ভাবে কৃষক তাদের ফসল বিক্রয় করতে পারে সে ব্যাপারেও সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।