দেশের খবর: সরকারের বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থাসহ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির খবর যখন গণমাধ্যমে অহরহ প্রকাশ পাচ্ছে, তখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। হাজারো কর্মকর্তার মধ্য থেকে দুর্নীতিমুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্ধানে নেমেছে মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিকল্পনা কমিশন ও পরিকল্পনা বিভাগের মধ্যে কোনো দুর্নীতিমুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী পাওয়া গেলে তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে। কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই এমন সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী খুঁজতে এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজও শুরু করেছে। আসছে জুলাইয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সৎ ও নির্লোভ কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন—এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে দুর্নীতি বন্ধে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা রয়েছে। তারই আলোকে আমরা সৎ কর্মকর্তার খোঁজে নেমেছি। দুর্নীতিমুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী মিললে আমরা তাঁদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করব। আমরা যতজনকেই পাব, সবাইকে পুরস্কৃত করা হবে।’
সরকার প্রতিবছর উন্নয়ন বাজেটে যে টাকা বরাদ্দ দেয়, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক টাকা বিতরণ ও তত্ত্বাবধান হয়ে থাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপিতে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই টাকা বরাদ্দ ও নজরদারি করে থাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। তাই এই মন্ত্রণালয়ে ফাইলের নাড়াচাড়াও বেশি। সৎ কর্মকর্তা শনাক্তকরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাই এই মন্ত্রণালয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই প্রথমবারের মতো সৎ কর্মকর্তার খোঁজে নেমেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এর আগে কখনো এই মন্ত্রণালয় থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিষয়টির সূত্রপাত হয় গত ১৭ এপ্রিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায়, যেখানে পরিকল্পনাসচিব নূরুল আমিন নিজেই সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত কর্মকর্তা বের করার তাগিদ দেন। ওই সভায় পরিকল্পনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফৌজিয়া জাফরীনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এরই মধ্যে একাধিকবার বৈঠক করেছে। ১ জুলাই ২০১৮ থেকে ৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ টেবিলের কাজের আমলনামা বিচার-বিশ্লেষণ করে সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী বাছাই করা হবে।
কোন মানদণ্ডে একজন সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত কর্মকর্তা বাছাই করা হবে—এমন প্রশ্নে পরিকল্পনাসচিব বলেন, ‘আমরা দেখব কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর টেবিলে ফাইল আটকিয়ে রাখেন না। ফাইল আটকে রাখার মানেই হলো তাঁর মধ্যে অসততা রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর কাজে কতটা আন্তরিক তা নির্ণয় করা হবে। কোন কর্মকর্তার অনলাইনে নোটিশ নিষ্পত্তির হার কেমন। অনলাইনে নথিভুক্তির হার কেমন—এসব দিক যাচাই-বাছাই করে সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত কর্মকর্তা বাছাই করা হবে। আরো কিছু টুলস আছে, যেগুলো দেখলেই জানা যাবে, কোন কর্মকর্তা দুর্নীতিমুক্ত।’ এমন উদ্যোগে মন্ত্রণালয় থেকে ধীরে ধীরে দুর্নীতি কমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পরিকল্পনাসচিব।
জানা গেছে, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন ২০১১ সালে যখন যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিলেন, তখন তিনি নিজ কার্যালয়ে সৎ কর্মকর্তা খোঁজার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ওই সময় তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল সততার জন্য। যশোরের ডিসি থাকাকালীন ওই উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিকল্পনা বিভাগের দায়িত্ব পেয়ে ফের সৎ কর্মকর্তার সন্ধানে নেমেছেন সচিব নূরুল আমিন।