খেলার খবর: দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন জো রুট। তার অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০১ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। দলের জয়ে ৯৪ বলে ১১টি চারের সাহায্যে অপরাজিত ১০০ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন রুট।
এবারের বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুটি সেঞ্চুরি করেছেন রুট। বিশ্বকাপে সবমিলে তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০৪ বলে ১০৭ রান করেছিলেন রুট। এর আগে গত বিশ্বকাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১২১ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি।
শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৩ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে ইংল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতে অনবদ্য ব্যাটিং করেন ইংলিশ দুই ওপেনর জনি বেয়ারস্টো ও জো রুট। ৭.১ ওভারে দলীয় ফিফটি রান পূর্ণ করেন তারা।
শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন জো রুট-বেয়াস্টো। দুজনই ফিফটির পথেই ছিলেন। ইনিংসের ১৪.৪ ওভারে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের গতির বলে কার্লোস ব্রাথওয়েটের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন বেয়ারস্টো। দলীয় ৯৫ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তার আগে ৪৬ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৪৫ রান করেন বেয়ারস্টো।
ব্যক্তিগক ৪৫ রানে জনি বেয়ারস্টো আউট হলেও ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে যান রুট। ৫০ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর সেঞ্চুরির জন্য একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ক্রিস ওকসের সঙ্গে গড়েন ১০৪ রানের জুটি। তাদের এই জুটিতেই জয়ের দুয়ারে চলে যায় ইংল্যান্ড।
জয়ের জন্য শেষ দিকে ১০৯ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৪ রান। এমন অবস্থায় উইকেট হারান ওকস। তার আগে ৫৪ বলে ৪০ রান করেন তিনি। তবে ক্রিস ওকস বিদায় নিলেও বেন স্টোকসকে সঙ্গে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন জো রুট।
ওয়েস্ট উইন্ডিজ ২১২/১০
মার্ক উড ও জোফরা আর্চারের গতির মুখে পড়ে ৪৪.৪ ওভারে ২১২ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৮ বলে ৬৩ রান করেন নিকোলাস পুরান। এছাড়া ৩৯ রান করেন সিমরন হিতমার। ৩৬ রান করেন ক্রিস গেইল। ইংলিশদের হয়ে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন মার্ক উড ও আর্চার।
শুক্রবার ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের রোজ বোলে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ক্রিস ওকসের গতির বলে স্ট্যাম্প ভেঙে যায় এভিন লুইসের। সাজঘরে ফেরার আগে ৮ বলে মাত্র ২ রান করার সুযোগ পান তিনি।
লুইসের বিদায়ের পর প্রাথমিক ধাক্কা সামলিয়ে দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন ক্রিস গেইল ও শাই হোপ। দ্বিতীয় উইকেটে তারা গড়েন ৫০ রানের জুটি। এরপর মাত্র এক রানের ব্যবধানে গেইল-হোপের উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ক্যারিবীয়রা।
লিয়াম প্লাঙ্কেটকে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে জনি বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ তুলে দেন গেইল। ৪১ বলে ৫টি চার ও এক ছক্কায় ৩৬ রান করে ফেরেন তিনি। অবশ্য ব্যক্তিগত ১৫ রানেই সাজঘরে ফেরার কথা ছিল গেইলের।
ইনিংসের সপ্তম ওভারে ক্রিস ওকসের বলে থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলে দেন গেইল। ফ্লাডলাইটের উপরে ওঠা বলটি ভালোভাবেই তালুবন্দি করেন মার্ক উড। ক্যাচটি হাতের মুঠোয় নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। আর তখনই বিপত্তি ঘটে। মার্ক উডের হাত ফসকে বলটি মাটিতে পড়ে যায়।
নতুন করে লাইফ পেয়ে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন গেইল। কিন্তু সুযোগ পেয়েও নিজের ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি এই ব্যাটিং দানব। গেইলের বিদায়ের পর মার্ক উডের অসাধারণ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন শাই হোপ। তার আগে ৩০ বলে মাত্র ১১ রান করার সুযোগ পান তিনি।
দলীয় ৫৫ রানে এভিন লুইস, ক্রিস গেইল ও শাই হোপের উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যায় উইন্ডিজ।
নিকোলাস পুরান ও সিমরন হিতমারের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে খেলায় ফেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চতুর্থ উইকেটে তাড়া গড়েন ৮৯ রানের জুটি। এরপর আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়। ৪৪ রানের ব্যবধানে নেই হিতমার, জেসন হোল্ডার ও আন্দ্রে রাসেলের উইকেট। সিমরন হিতমার ৪৮ বলে ৩৯ রান করে জো রুটের স্পিনে বিভ্রান্ত। একই অবস্থা ক্যারিবীয় অধিনায়ক হোল্ডারের। তিনিও রুটের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন।
১২ রানের ব্যবধানে হিতমার-হোল্ডারের বিদায়ের পর আন্দে রাসেলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন নিকোলাস পুরান। কিন্তু এ জুটি বেশি দূর এগোতে পারেনি। মার্ক উডের বলে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ১৬ বলে ২১ রানে ফেরেন রাসেল।
তবে একাই লড়াই করে যান নিকোলাস পুরান। ৫৬ বলে ফিফটি গড়া নিকোলাসকে সাজঘরে ফেরান জোফরা আর্চার। তার আগে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৮ বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ৬৩ রান করেন তিনি।
নিকোলাস পুরানের বিদায়ের পর শেলডন কটরিল, কার্লোস ব্রাথওয়েট ও শ্যানন গ্যাব্রিলরা সময়ের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরায় ৪৪.৪ ওভারে ২১১ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৪.৪ ওভারে ২১২/১০ (পুরান ৬৩, হিতমার ৩৯, গেইল ৩৬, রাসেল ২১, মার্ক উড ৩/১৮, জোফরা ৩/৩০)।
ইংল্যান্ড: ৩৩.১ ওভারে ২১৩/২ (জো রুট ১০০*, জনি বেয়ারস্টো ৪৫, ক্রিস ওকস ৪০, স্টোকস ১০*)।
ফল: ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।