ভিন্ন স্বাদের খবর: সরকারি অফিসে ঘুষ গ্রহণ বন্ধ করতে অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন। উপজেলার তিনটি সরকারি কার্যালয়ে তার উদ্যোগে সাঁটানো হয়েছে ‘ঘুষ বোর্ড’। সেবা পাওয়ার বিনিময়ে ঘুষ দিতে বাধ্য হলে ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বা কর্মচারীর তথ্য এই বোর্ডে লিখতে পারবেন নাগরিকরা।
সরকারি কার্যালয়ে ঘুষ বোর্ড স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারীর ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, ‘সরকারি অফিসে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী আছেন যারা মনে করেন ঘুষ গ্রহণ করাটাই তাদের অধিকার। তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। কোনও নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে এসে যদি কাউকে কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ঘুষ দিতে হয় তাহলে তিনি যাকে টাকা দিয়েছেন তার নাম পরিচয় এই বোর্ডে লিখে দিতে পারবেন।’
ইউএনও জানান, এখন পর্যন্ত হাটহাজারী উপজেলার তিনটি কার্যালয়ে ঘুষ বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। গত শনিবার নিজ দফতর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রথম ঘুষ বোর্ড লাগান তিনি। এরপর সোমবার উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এটি স্থাপন করা হয়। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার পৌরসভা কার্যালয়ে ঘুষ বোর্ড স্থাপন করা হয়।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি চাকরিতে যোগদানের পর থেকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার মতো সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুক। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত। সরকারি একজন আমলা হয়েও বিভিন্ন দফতরে কাজ করতে গিয়ে আমাকে ঘুষ দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত পীড়াদায়ক ব্যাপার। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নাগরিকদের সেবা করাই আমাদের কাজ। কিন্তু কিছু অসাধু কর্মকর্তা এর বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেন। ঘুষ গ্রহণে তাদের মধ্যে যেন লজ্জাবোধ তৈরি হয় সেই চিন্তা থেকেও এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কার্যালয়ে প্রথমে ঘুষ বোর্ড স্থাপন করেছি। ইতোমধ্যে উপজেলার আরও দুটি সরকারি কার্যালয়ে ঘুষ বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। আগামী বৃ্হস্পতিবার উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে এই ঘুষ বোর্ড স্থাপন করা হবে। ক্রমান্বয়ে উপজেলার সবগুলো অফিসে এই বোর্ড স্থাপন করা হবে।’
এখন পর্যন্ত ঘুষ বোর্ডে কোনও অভিযোগ পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখনও কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সরকারি অফিসে ঘুষ প্রথা বন্ধ করতে হলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নাগরিকদের যদি সৎ সাহস না থাকে তাহলে কোনোভাবেই এটিকে রোধ করা সম্ভব হবে না। একটা উদ্যোগ নিয়েছি, কতটুকু সফল হবো জানি না। তবে এই সফলতা নির্ভর করছে নাগরিকদের সৎ সাহসের ওপর। একজন নাগরিকও যদি সৎ সাহস নিয়ে এগিয়ে আসেন তাহলেই ভাববো আমার উদ্যোগটি সফল হয়েছে।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ঘুষের লেনদেন একেবারে কমিয়ে না আনলেও এই উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে এবং সচেতনতা সৃষ্টি হবে। কর্মকর্তারাও ঘুষ নেওয়ার আগে চিন্তা করবেন।’
হাটহাজারি সদর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আক্তার কামাল বলেন, ‘আমরা বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছি। ভূমি অফিসে সেবা নেওয়ার বিষয়ে অনেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেন। এই বোর্ডে অভিযোগ করে গ্রাহকরা কিছুটা হলেও উপকার পাবেন।’