দেশের খবর: বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার বাবা দুলাল শরীফের করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।
শনিবার রাতে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দুলাল শরীফের করা ওই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার নয়াকাটা গ্রামে নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন মিম্নি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ০০৭ নামের যে গ্রুপটি, বরগুনায় যারা সৃষ্টি করেছে তারা খুবই ক্ষমতাবান ও অর্থশালী। তাই তারা রিফাত হত্যাকাণ্ডের বিচারের আওতা থেকে দূরে থাকার জন্য আমার শ্বশুরকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ মনগড়া ও বানোয়াট।
মিনি বলেন, আমার শ্বশুর (রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ) অসুস্থ এবং একমাত্র ছেলে হারিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফলে এখন যা বলেন তা কোনও কিছুই পড়ে মনে থাকেনা। মিন্নি তার শ্বশুরের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া সকল বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে আমার স্বামী রিফাত শরীফকে নয়ন বন্ডসহ কতিপয় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে। আমি আমার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য অস্ত্রের মুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করেছি। আমার সাহসের প্রশংসা করেছে সারাদেশের মানুষ। সেই থেকে আমার স্বামীর বিচারের দাবিতে সারাদেশে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মিন্নি বলেন, এ ঘটনায় আমার শ্বশুর নয়নবন্ডসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আমি এক নম্বর স্বাক্ষী। কিন্তু বর্তমানে রিফাত হত্যার বিচার অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ আমাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মিন্নির দাবি, তাকে হয়রানি এবং তার মানসম্মান নষ্ট করার জন্যই ফেসবুকে বিভিন্ন ছবি এডিট করে পোষ্ট করা হচ্ছে।
রিফাত শরীফকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সময় মিন্নি কেন সাথে যাননি শ্বশুরের এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক যখন আমার স্বামীকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে তখন আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি এবং জ্ঞান ফিরলে আমি জানতে পারি তাকে বরিশাল নেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে মিন্নিকে যেভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে, সে কারণে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বরগুনা পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি এক স্বামীহারা অসহায় নারী, আমার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র করে তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।
রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার রাতে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘটনায় মিন্নিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান মিন্নির শ্বশুর ও নিহত রিফাতের বাবা আব্দুল হালীম দুলাল শরীফ।
গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোররাতে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ সাত আসামি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।