অনলাইন ডেস্ক: বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার মামলার প্রধান স্বাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে এই জবানবন্দি দেন মিন্নি। এর আগে বৃহস্পতিবার মিন্নিকে একই আদালত থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির জানান, বৃহস্পতিবার ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পর তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হন। তাই শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের কাছে জবানবন্দি দেন তিনি।
মিন্নি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।
মামলার অন্যান্য আসামিদের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়েছে, কিন্তু একমাত্র মিন্নিকে কেন রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই হাজির করা হল সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, তিনি রিমান্ডে নেওয়ার পর যখনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন তখনই তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
মিন্নির বাবার অভিযোগ রাজনৈতিক প্রভাবে এ মামলা পরিচালিত হচ্ছে, এ বিষয়ে হুমায়ূন কবির বলেন, পুলিশ কোন ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবে নেই। মামলা মামলার গতিতে চলছে।
মিন্নির জবানবন্দিকালে আদালতের বাইরে থাকা তার বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে শিখাইয়া, বানাইয়া, জীবনের হুমকি দিয়া জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনজীবী এবং বুদ্ধিজীবী সকলের কাছে নিবেদন, দেখেন এখানে কি হচ্ছে। অন্যায়ভাবে আমার ওপর জুলুম করা হচ্ছে। রিফাত হত্যার আসামিরা খুনের ঘটনা আড়াল করার জন্য আমার মেয়েরে ফাঁসাইতেছে। আমার চোখের সামনে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। আমার পরিবার আজ গৃহবন্দি। আমার ছেলে-মেয়ে স্কুল কলেজে যেতে পারছে না। বাসার হাট-বাজার বন্ধ। ১৬৪ ধারার নামে আমার মেয়েকে তালাবন্ধ করে নির্যাতন করছে। আমি আত্মহত্যা করবো, আমি বাঁচতে চাই না। আমার মেয়ে অসুস্থ্য, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমার মেয়েক শেষ করে দিয়েছে।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আজ জীবন নিয়ে খেলা চলছে। আমার মেয়ে স্বামীহারা, আমি স্বজনহারা হয়ে যাচ্ছি। আমি অসহায়, আমি দুর্বল।’
এসব কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
উল্লেখ্য, ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় পরের দিন ২৭ জুলাই ১২ জনের নাম উল্লেখ করে নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে এবং মামলার এক নম্বর আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গ্রেফতারদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৩ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং মামলার দুই ও তিন নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী এবং রিশান ফরাজীকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।