রাজনীতির খবর: দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের ছেঁটে ফেলবে আওয়ামী লীগ। ভোল পাল্টে ও ‘ডিগবাজি’ দিয়ে অন্য দল থেকে ঢুকে পড়া এমন সদস্যদের বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে দলটিতে। ফলে মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের প্রশ্রয়ে দলের পদ-পদবি পাওয়া যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যরাসহ বিতর্কিত এবং সুবিধাবাদীরাও বাদ পড়বেন।
দেশব্যাপী চলমান সাংগঠনিক সফরকালে এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। জেলায় জেলায় বর্ধিত ও কর্মিসভায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করা হচ্ছে। যারা এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে।
এ অবস্থায় আগামীকাল রোববার থেকে শুরু হচ্ছে দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান। এ অভিযানকালে নতুন ভোটারদের দলের সদস্য করার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হলেও অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দেওয়ার বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। যারা এর আগেই দলে ঢুকে পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়েছেন, তাদের সদস্যপদ নতুন করে নবায়ন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। দলের জেলা-উপজেলা কমিটিকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাম্প্রতিক দলীয় ফোরামের বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যরাসহ হাইব্রিড যারা দলের মধ্যে আগেই ঢুকে পড়েছেন, তাদের সদস্যপদ কোনো অবস্থায় নবায়ন করা হবে না। স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবেন না- এটিও পুরনো সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, নির্বাচনের সময় জোয়ারে অনেকেই আওয়ামী লীগ ও নৌকার পক্ষে মিছিল করেছেন। সবাইকে দল ধারণ করতে পারবে কি-না- সেটা ভাবতে হবে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির কেউ আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না। দুষ্ট গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভালো।
চলতি বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ১১ মে থেকে বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক সফরে বের হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আটটি টিম। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা সম্মেলন আয়োজন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযান জোরদার করা এবং ‘মুজিব বর্ষে’ দেশজুড়ে দলীয় কর্মসূচি আয়োজনসহ কয়েকটি লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এ সাংগঠনিক সফর চলছে। ইতিমধ্যে খুলনা মহানগর ও জেলা, যশোর, নড়াইল, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ জেলা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, বরিশাল এবং ফরিদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বর্ধিত ও কর্মিসভায় যোগ দিয়েছেন নেতারা। জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এবারের সাংগঠনিক সফরে দলে ঢুকে পড়া বহিরাগত এবং নানা অপকর্মে জড়িতদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এই সফরে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা গুরুত্বের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করছেন। তালিকার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ নেতাকর্মীদের দল ও সংগঠনের সব পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হবে। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নীতিগত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় ফোরামের সাম্প্রতিক এক সভায় বলেন, জনগণের কাছে যারা অগ্রহণযোগ্য ও ভালো মানুষ নয়- তাদের আওয়ামী লীগে কোনো প্রয়োজন নেই। তাই দলকে এসব খারাপ লোক থেকে মুক্ত রাখার উদ্যোগ নেবেন তারা। দলের তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলে দূষিত রক্তের কোনো প্রয়োজন নেই, বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চার করতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, চলমান সাংগঠনিক সফরকালে দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দেওয়া এবং নতুন করে ঠাঁই না দেওয়ার বিষয়ে তৃণমূল নেতাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত বিভিন্ন কমিটির নেতাদের নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বরসহ যাবতীয় তথ্যও সংগ্রহ করছেন তারা। এর ভিত্তিতে একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। এতে দলে অনুপ্রবেশকারীদের ছেঁটে ফেলা সহজ হবে।
দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, সাংগঠনিক সফরকালে দলের ভেতরে অনুপ্রবেশকারী তথা অশুভ শক্তি রয়েছে কি-না- সে বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এদের দল থেকে বিতাড়নের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।