বিদেশের খবর: কানাডার টরন্টোতে বসবাস করা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক তরুণ মা-বাবাসহ নিজ পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। টরন্টোর মারখাম উপ-শহরে ক্যাসেলমোর এভিনিউয়ের একটি বাসায় রোববার দুপুরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পুলিশ খবর পেয়ে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে চারটি লাশ উদ্ধার। এ সময় ঘটনাস্থলে মিনহাজ জামান (২৩) এক তরুণ তার পরিবারের চার সদস্য হত্যার কথা স্বীকার করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশকে তিনি জানান, প্রথমে আম্মু, পরে নানী, তারপর বোন ও সবশেষে আব্বুকে হত্যা করেছি।
ইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র অ্যান্ডি প্যাটেনডেন জানান, আত্মসমর্পনের পর সোমবার মিনহাজকে টরন্টোর নিউমার্কেট আদালতে হাজির করা হলে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়। হত্যার কারণ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মিনহাজ একেকবার একেকরকম কথা বলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার দায়ে তাদের হেফাজতে থাকা মিনহাজ জামানের বাবা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে কয়েক দশক আগে কানাডায় পাড়ি জমান। মা মমতাজ মুক্তা জামান, ছোটবোন ম্যালিসা (২১) ও নানিকে নিয়ে একসঙ্গেই তারা ওই বাসায় থাকতেন।
প্রতিবেশীদের উদ্ধৃত করে টরন্টোর গণমাধ্যমগুলো বলছে, স্বল্পভাষী, শান্তশিষ্ট মিনহাজ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ঝরে পড়ার পর ধীরে ধীরে নিভৃতচারী হয়ে পড়েন। শুধু নিকটস্থ মল এবং ব্যায়ামাগারে সময় কাটাতেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের খবর জানিয়ে মিনহাজ নামে একটি আইডি থেকে অনলাইন গেমারদের নেটওয়ার্কিং সাইট ‘ডিসকর্ডে’ নিহতদের ছবি পোস্ট করেন বলে দুজন গেমার জানিয়েছেন। ওই পোস্টের সঙ্গে মিনহাজের বার্তায় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ড্রপ আউট’ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। একসময় নাস্তিকতায় পেয়ে বসে তাকে। তখন থেকে নিজের লজ্জা ও হতাশার কথা পরিবারের কাছে গোপন রাখতে তিনি তাদেরকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। হত্যাকাণ্ডের একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, প্রথমে আম্মু, তারপর নানী, তারপর বোন ও সবশেষে আব্বুকে হত্যা করি। সবশেষে তিনি লেখেন ‘পুলিশ এসে গেছে, গুডবাই।’
মিনহাজ এ ধরনের হতাশাজনক পোস্ট আগেও দিয়ে আসছিল বলে তার এই বার্তা কেউ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে অপর প্রান্তে তার সাথে খেলতে থাকা বন্ধুটি পুলিশকে খবরটি জানায়। পরে পুলিশ বাড়ির সামনে থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে মিনহাজকে আটক করে। কীভাবে এই চারজনকে হত্যা করা হয়েছে তা সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ ইয়র্কের পুলিশ গণমাধ্যমকে জানায়নি। ঘটনার তদন্ত ও লাশের ময়নাতদন্তের পরই বিস্তারিত জানানো হবে বলে অ্যান্ডি জানান।