বিশেষ ডেস্ক: ‘মশার উপদ্রব যখন শুরু হয় তখন দুই সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু ওষুধ ঠিক মতো কাজ করছে না’ বলে হাইকোর্টকে জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
‘বিদেশ থেকে কার্যকর ওষুধ আনতে গড়িমসি’র বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বৃহস্পতিবার সশরীরের হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে এমন তথ্য জানান। তিনি আরও বলেন, ‘চায়না থেকে ওষুধ আনার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা তদারকি-মনিটরিং সবকিছু করছি। ওষুধ আনতে লাইসেন্স লাগবে।’
আদালত এ সময় বলেন, ‘সরকার টু সরকার (জিটুজি) ওষুধ আনলে কি লাইসেন্স লাগে? বন্যা, ভূমিকম্প বা বিভিন্ন দুর্যোগের সময় তো সরকার অন্য দেশের সরকারকে বলে অনুদান আনেন। তখন তো লাইসেন্স লাগে না। একটা সমস্যার কথা বললে, আমার দেশে মশার উপদ্রব যে বেড়েছে তারা কি সেটা দেখবে না?’
এ সময় হেলালুদ্দীন বলেন, ‘উত্তর সিটি কর্পোরেশন নমুনা সংগ্রহ করেছে। যত দ্রুত সম্ভব ওষুধ আনার ব্যবস্থা করা হবে, ওষুধ আনার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও দুই সিটি কর্পোরেশেনের সঙ্গে গত ২৮ জুলাই বৈঠক করেছি।’ আদালত বলেন, ‘বৈঠক করেছেন ঠিক আছে, কিন্তু ওষুধ আনবে কারা? স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নাকি সিটি কর্পোরেশন?’ তখন সচিব বলেন, ‘আমরা সব ধরনের তদারকি করব। কিন্তু ওষুধ আনবে সিটি কর্পোরেশন।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘আপনাকে ঠিক মতো ব্রিফিং করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীও তো বলে দিয়েছেন, মশার কার্যকর ওষুধ ছিটানোর জন্য। সকালে দক্ষিণ সিটির আইনজীবী বললো, আপনারা ওষুধ আনবেন। আর আপনি বলছেন সিটি কর্পোরেশন। আসলে মশার ওষুধ কে আনবে সেটা জানার জন্য আপনাকে ডাকা।’
তখন সচিব বলেন, ‘আমরা সমন্বয় করে ওষুধ আনব।’ এ পর্যায়ে সচিব আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশন মিলে ওষুধ আনবে।
আদালত বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন থেকে তো এখন ডেঙ্গু সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সিটি কর্পোরেশন ওষুধ আনবে ঠিক আছে যদি ইউনিয়নে সমস্যা হয় তা হলে কি ইউনিয়ন পরিষদ দেখবে সেটা, নাকি স্থানীয় সরকার?’ সচিব বলেন, ‘এখন যে দেশে ক্রাইসিস চলছে, এ বিষয়ে আমরা বসে নেই। কাজ করছি।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘আপনারা ঠেলাঠেলি করছেন, একজনকে আরেক জনকে দোষ দিচ্ছেন। সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী সকালে দরখাস্ত দিয়ে বলেছে, আপনারা ওষুধ আনবেন। আপনাদের ঠেলাঠেলিতে তো কিছুই হচ্ছে না।’
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মশক নিধন ওষুধ আনার বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আদালতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়রা ফাইরোজ।
এর আগে মশা মারতে নতুন ওষুধ আনার বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানাতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে তলব করেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় তাকে হাজির হতে বলা হয়।
এমন নির্দেশনায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আদালতে উপস্থিত হন। আদালত তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নতুন ওষুধ আনার বিষয়ে সরকার ও সিটি কর্পোরেশন দুই ধরনের কথা বলছে। এর পরিণতি কী বুঝতে পারছেন?’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এডিস মশার প্রজননস্থানগুলো ধ্বংসে সফলতা না এলে এ রোগের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আদালত গত মঙ্গলবার এক আদেশে মশা মারার যথাযথ ওষুধ আনতে কত সময় লাগবে, তা বৃহস্পতিবারের (১ আগস্ট) দুপুরের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেন। দুই সিটি কর্পোরেশন ও রাষ্ট্রপক্ষকে সুনির্দিষ্টভাবে তা হলফনামা আকারে জানাতে বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুনানি ও সচিবকে তলব করা হয়।