দেশের খবর: বরগুনার পুলিশ সুপারের (এসপি) আচরণ হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট।
বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে একথা উল্লেখ করা হয়।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেনকে সতর্ক করেন। কারণ, মিন্নি জবানবন্দি দেওয়ার আগের দিনই সংবাদ সম্মেলন করে এসপি দাবি করেন, মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে আদালত বলেছেন, অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী বলা যাবে না। পুলিশ সুপারের বক্তব্য অযাচিত-অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তেরও পরিপন্থি।
মিন্নির জামিনের বিষয়ে রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘এজাহারে আসামির নাম উল্লেখ না থাকা; গ্রেফতারের আগে দীর্ঘ সময় মিন্নিকে পুলিশ লাইনসে আটক রাখা এবং গ্রেফতারের প্রক্রিয়া; আদালতে হাজির করে রিমান্ড শুনানির সময় আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না পাওয়া; ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট লিপিবদ্ধ করার আগেই আসামির দোষ স্বীকার সম্পর্কিত এসপির বক্তব্য; মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে থাকায় আসামির তদন্ত প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ না থাকা এবং সর্বোপরি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ও ৯৭ ধারার ব্যতিক্রম, অর্থাৎ আসামি একজন নারী– এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা তাকে জামিন দেওয়া ন্যায়সঙ্গত মনে করছি।’
রায়ে বলা হয়, মিন্নি তার বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং মিডিয়ার সামনে কোনো কথা বলতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় ঘটলে তার জামিন বাতিল হবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বরগুনার এসপির ব্যাপারে বলা হয়, পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যা-ই হোক না কেন, পুলিশ সুপারের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বক্তব্য দিলে তা জনমনে নানান প্রশ্নের জন্ম দেয়। তিনি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি, যা দুঃখজনক ও হতাশাজনক। উচ্চপর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশিত ও কাম্য নয়। দায়িত্ব পালনে এরপর থেকে তিনি সতর্কতা ও পেশাদারি মনোভাবের পরিচয় দেবেন– এটাই আদালতের প্রত্যাশা। মামলাটির তদন্তকাজ চলমান থাকায় আদালত এই মুহূর্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকছে। তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
রায়ের পর মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, মিন্নির জামিনাদেশ এবং পুলিশ সুপারের বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ মাইলফলক হয়ে থাকবে। কাউকে গ্রেফতারের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে তুলে ধরে তাও শোভনীয় নয়। অনেক সময় দেখা যায়, যাকে অপরাধী বলা হয় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।
গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এতে প্রধান সাক্ষী ছিলেন মিন্নি। ১৬ জুলাই নাটকীয়ভাবে মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর কয়েক দফায় মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন বিচারিক আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি হাইকোর্টে মিন্নির জামিনের আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার মিন্নিকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন।