বিদেশের খবর: সৌদি আরবের ৫০০ সেনাকে হত্যার দাবি করেছে প্রতিবেশী ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা।
এছাড়াও দুই হাজার সেনাকে আটক ও সামরিক বাহিনীর যানবাহনের একটি বহরকে জব্দের কথাও জানিয়েছে তারা। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এই অস্বাভাবিক দাবি করেছে হুতিরা।
২০১৫ সাল থেকে হুতিদের বিরুদ্ধে অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। এতে নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। দুর্ভিক্ষের কিনারে গিয়ে ঠেকেছে ইয়েমেন।
সৌদি সেনা হত্যা ও গ্রেফতারের দাবির পক্ষে প্রমাণ হিসেবে স্থির চিত্র ও অসম্পূর্ণ ভিডিও উপস্থাপন করেছেন বিদ্রোহীরা।
ছবিতে সেনারা উর্দি পরিহিত না, আবার দাবিকে সত্য বলে প্রমাণ করতে যথেষ্ট প্রমাণ যেমন নেই, তেমন সৌদি আরবের কাছ থেকেও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
উল্টে যাওয়া সৌদি যান, স্থির দাঁড়িয়ে থাকা সৌদি সেনা বহরের যানবাহনের ছবি দেখিয়ে হুতিরা বলেন, দক্ষিণ নাজরান অঞ্চলে গত তিন দিন ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ইয়েমেনের সঙ্গে সৌদির নজরান প্রদেশের সীমান্ত রয়েছে। হামলা আরও তীব্রতার সঙ্গে চলবে বলেও জানিয়েছেন বিদ্রোহীরা।
হুতিদের মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদুল সালাম বলেন, ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বড় একটি সামরিক বিজয় হয়েছে। শত্রুরা মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। মাত্র অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বিশাল অঞ্চল শত্রুর হাত থেকে মুক্ত হয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে শত শত সেনা মৃত ও আহত অবস্থায় পড়ে আছে বলে দাবি করেন তিনি। আবদুল সালাম বলেন, ইয়েমেন থেকে কীভাবে সেনা প্রত্যাহার করবে, তা বিবেচনা করা ছাড়া রিয়াদের সামনে খুব কমই বিকল্প আছে।
হুতিরা তাদের হামলা বন্ধ করবে; যদি সৌদিরা অনুরূপ পদক্ষেপ নেয় বলে জানিয়েছেন বিদ্রোহীদের এই মুখপাত্র।
এই হামলার ঘটনা যদি সত্য হয়, তবে তা সৌদি আরবের ভূখণ্ডে উল্লেখযোগ্য শক্তিপ্রয়োগের ঘটনা হবে বিদ্রোহীদের। এছাড়া রিয়াদের জন্য এটি আরেকটি বিব্রতকর পরিস্থিতি হিসেবে থেকে যাবে।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে সৌদির আরামকোর দুটি তেল স্থাপনায় হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছিল তাদের মার্কিন-নির্মিত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে হুতি বিদ্রোহীরা।
শনিবার সৌদি আরবের তিনটি সেনাদল আটকের দাবি করেছে হুতিরা। তবে এ বিষয়ে রিয়াদের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হুতিরা আবদ রাব্বি মানসুর আল-হাদিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলে সৌদি নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় জোট ২০১৫ সালে ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ করে।
এরপর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেনি সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে তারা একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইয়েমেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বিভিন্ন অংশে বোমা হামলা বন্ধে সৌদি আরব সম্মত হয়েছে বলেও খবর প্রচারিত হয়েছে।
কয়েকটি অঞ্চলে বোমা হামলা কমিয়ে আনতে ও বন্দিবিনিময়ে সৌদি আরবের একটি সীমিত প্রস্তাবের কথা নিশ্চিত করেছে পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্র।
পুরোপুরি সামরিক বিজয়ের সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে চলতি বছরের শুরুতে ইয়েমেন থেকে বেশ কিছু সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে সৌদি জোটের অন্যতম অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সৌদি তেল স্থাপনায় হামলার সপ্তাহখানেক পর দেশটিতে ড্রোন হামলা বন্ধে একটি আকস্মিক প্রস্তাব দিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ তাতে সায় দিয়ে বলেছে, এতে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আলোচনার দুয়ার খুলে যাবে।