দেশের খবর: ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে সর্বস্তরে ব্যবহারের জন্য অভিমত ব্যক্ত করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মহান বিজয় দিবস) থেকে এটি কার্যকর করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে ১৪ জানুয়ারি।
আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এ-সংক্রান্ত রিটের শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, আব্দুল মতিন খসরু ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন প্রমুখ।
আদালতে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদ। আবেদনের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন।
ড. বশির আহমেদের করা এক রিট আবেদনে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ, আইন ও শিক্ষা সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এরপর ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর এক আদেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়ে সরকারের বক্তব্য ও রাষ্ট্রীয় নীতি জানতে চাওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় দুই বছর আগে জারি করা রুলের ওপর গত ৪ ডিসেম্বর শুনানি হয়।
শুনানিতে ড. বশির আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বের ১৬৩টি দেশে তাদের জাতীয় স্লোগান আছে। তাই আমরা বাংলাদেশেও জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান বা মোটো (মূলমন্ত্র) হিসেবে ঘোষণার নির্দেশনা চাচ্ছি।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘এটি সরকারের নীতিনির্ধারণের বিষয়। এ জন্য জাতীয় সংসদকে আইন করতে হবে। আমরা জাতীয় সংসদকে আইন করার নির্দেশ দিতে পারি না। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় আছে।’
ড. বশির আহমেদ তখন বলেন, নির্দেশনা না দিতে পারলে আদালত অভিমত প্রকাশ তো করতে পারেন।
এ সময় আদালত রিট আবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য জানতে চান। জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা এই রিট আবেদনকে সমর্থন করি। আমাদের সংবিধানে জাতীয় প্রতীক, জাতীয় সংগীত, রাষ্ট্রীয় ধর্মসহ বিভিন্ন জাতীয় বিষয় নিয়ে বলা হয়েছে, কিন্তু জাতীয় স্লোগান নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই। যদিও সংবিধানের ১৫০ (২) নম্বর অনুচ্ছেদে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ সন্নিবেশিত হয়েছে। সেখানে শেষ অংশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান যুক্ত আছে। তাই আমাদেরও এ বিষয়টি সুনির্দিষ্ট হওয়া দরকার।
এর আগে ৭ই মার্চকে জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে ঘোষণা চেয়ে করা এক রিট আবেদনের ওপর শুনানিকালে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর আদালত বলেছিলেন, ভারতে একজনের সঙ্গে আরেকজনের দেখা হলে তারা ‘জয় হিন্দ’ বলে সম্বোধন করেন। অথচ আমাদের এখানে সেটা নেই। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ‘জয় বাংলা’ বলা হতো, কিন্তু এখন এটা (জয় বাংলা) বললে বলা হয় যে ওটা তো একটি রাজনৈতিক দলের স্লোগান। আদালতের এ মন্তব্যের ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ডিসেম্বরে ড. বশির আহমেদ এই রিট আবেদন করেন।
আজ মঙ্গলবার শুনানি শেষে ড. বশির বলেন, ‘জয় বাংলা’ কোনো দলের স্লোগান নয়, এটি আমাদের জাতীয় প্রেরণার প্রতীক। আদালত যদি এই রিট আবেদনের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে ‘সকল সরকারি কর্মকর্তা এবং সাংবিধানিক কর্মকর্তাদের বক্তব্যের শুরুতে ও শেষে বাধ্যতামূলকভাবে জয় বাংলা বলতে হবে।’
এছাড়া স্কুল-কলেজের অ্যাসেম্বলির শুরু এবং শেষেও ‘জয় বাংলা’ ব্যবহার করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে অভিমতে।