দেশের খবর: প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণের সেবায় আইন ও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। প্রতিটি কর্মচারীকে চিন্তা করতে হবে কতটুকু সেবা আমি দিতে পারলাম। নিজের পরিবারের সদস্যদের মতোই দেশের মানুষের প্রতিও দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে সাবধান হতে হবে। কারণ, দুর্নীতির জন্য সব অর্জন ম্লান হয়।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) আইন ও প্রশাসন কোর্সের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের আত্মসংযম, আত্মনিয়োগ ও আত্মশুদ্ধি প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে জানার পরিধি এবং জ্ঞানচর্চা বাড়াতে হবে।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশের দেশগুলোর তুলনায় আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। দেশের মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিত করা ছিল আমাদের অন্যতম কাজ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আমরা এসব মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এর জন্য কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছি, সে অনুযায়ী কাজ চলছে।
স্বনির্ভর হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণের ধারণা এবং জাতিসংঘে এ বিষয়ে রেজ্যুলেশন আনার জন্য আমাদের সরকারই কাজ করেছে। তবে সেই সুবিধা নিয়ে নোবেল প্রাইজ পাওয়া একজন ব্যক্তি একটি ব্যাংকের এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ জন্য লবিংও করা হলো। দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়া হলো আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। আমার ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ডেকে অনেকবার চাপ দিয়েছে। তবে আমরা নতজানু হইনি, সততার জয় হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগ যে মিথ্যা তা প্রমাণিত হয়েছে। আজ বাংলাদেশ নিজের টাকায় পদ্মা সেতুর কাজ করছে। এর থেকে আমরা স্বনির্ভর হয়ে ওঠার আত্মবিশ্বাস পেয়েছি।
টেকসই উন্নয়নের জন্য সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয়ে সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে কাজ করতে হবে। আগামী দিনে যারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করবেন, তাদেরও উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।
কর্মকর্তাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশে আজ ডিজিটাল সিস্টেমে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই মাধ্যম ব্যবহার করে আমাদের কাজ করতে হবে। আর যেন আমাদের পিছিয়ে পড়তে না হয়। বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নের রোল মডেল বলা হচ্ছে, অনেকে আমাদের উন্নয়ন ম্যাজিকের বিষয়ে জানতে চান। সবাইকে বলি, আমাদের দেশপ্রেমের কারণেই এই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের আন্তরিকভাবে জনগণের সেবা করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের সেবা নিশ্চিতে সরকারি কর্মীদের দুশ্চিন্তা দূর করার চেষ্টা চলছে। বেতন-ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি গাড়ি, ফ্ল্যাটবাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। কর্মীরা ভালো কাজ করলে উন্নয়ন হবে। তখন বিভিন্ন সুবিধা আরও বাড়ানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
সততা ও আত্মত্যাগের সঙ্গে কাজ করার অনুপ্রেরণা পেতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জাতির জনকের অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচা পড়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিতে এখন থেকে কাজ শুরুর তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসবে। নতুন প্রজন্মের জন্য আমরা কী রেখে যাচ্ছি তা ভাবতে হবে। সে জন্য কোন জায়গায় কতটুকু উন্নয়নের দরকার, সেই অনুযায়ী কাজ করছি। মাদক-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি। আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই।
স্বাধীনতার সুফল দেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের অর্জনগুলো ধরে রাখতে হবে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে উন্নীত হতে চাই। ২০৭১ এবং শতবর্ষের ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়ন করে আগামী প্রজন্মকে উন্নত ও বাসযোগ্য একটি রাষ্ট্র উপহার দিতে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।