দেশের খবর: দেশের পেঁয়াজ বাজার কালো বাজারিদের হাতে যাওয়ার কারণে ডের হাজার কোটির উপরে টাকা জনগনের পকেট থেকে অতিরিক্ত গিয়েছে। সূত্র জানায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ। যা প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে গ্রহণ করছে মানুষ। গেল দুই মাসে এ পণ্যের মূল্য ছিল অস্বাভাবিক। এতে সংকটে পড়ে দরিদ্র্য মানুষ। বাড়তি দামের কারণে, পকেট থেকে বের হয়ে গেছে এক হাজার ৭২০ কোটি টাকা। তবে অনেকেই এ সময়ে পেঁয়াজ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, অনেকেই পেঁয়াজ থেকে দূরে ছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, একটা দরিদ্র্য পরিবারে মাসে দেড় থেকে ২ কেজি পেঁয়াজ ব্যবহার করে। ৪ কোটি মানুষ দরিদ্র্য মানে এক কোটি পরিবার দরিদ্র্য; এই এক কোটি পরিবারে প্রতিমাসে ২ কেজি পেঁয়াজ লাগলে এক মাসে ২ কোটি কেজি পেঁয়াজ তারা খায়।
তিনি জানান, খাদ্যাভ্যাসের কারণে অন্যান্য চাহিদায় লাগাম দিয়ে, পেঁয়াজ কিনে বাড়তি ব্যয় করে দরিদ্র্য মানুষ। সবশেষ খানা জরিপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে হতদরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা দুই কোটি। এই দুই কোটি মানুষ আগের দাম, অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে ৩৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনলে একমাসে ব্যয় হতো ৭০ কোটি টাকা। আর যদি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়, তাহলে ব্যয় দাঁড়াত ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু এক লাফে দেশি পেঁয়াজের কেজি হয় ২৫০ টাকা। সেই হিসেবে এক কেজি করে পেঁয়াজ ক্রয় করলে এক মাসে হতদরিদ্র্য মানুষের ব্যয় দাঁড়ায় ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাড়তি গুণতে হয়েছে ৪৩০ কোটি টাকা। দুই মাসে ব্যয় হয়, ৮৬০ কোটি টাকা। তবে অনেকেই দাম বৃদ্ধির কারণে ভোগ কমিয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে তাদের খরচ কম হয়। দেশে দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা, ৪ কোটি। দাম বাড়ার আগে, পেঁয়াজে গরিবের গচ্ছা । অর্থাৎ ৩৫ টাকা কেজি ধরলে চারকোটি মানুষের পেঁয়াজ কিনলে ব্যয় হতো ১৪০ কোটি টাকা। আর ৫০ টাকা দরে ব্যয় দাঁড়ায় ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু ২৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ ক্রয় করলে ব্যয় হয় এক হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এ চার কোটি মানুষের পকেট থেকে এক মাসে বের হয়েছে বাড়তি ৮৬০ কোটি টাকা।
খানা জরিপ অনুযায়ী, ২০১০ সালে একজন দরিদ্র মানুষের দিনে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ১৫ দশমিক ৬৯ গ্রাম। ২০১৬ সাল শেষে সেটা বেড়ে হয় ২১ দশমিক ৯৬ গ্রাম। আবার ২০১০ সালে দরিদ্র্য ছাড়া অদরিদ্র্য মানুষের দিনে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ২৪ দশমিক ৭৪ গ্রাম। ২০১৬ সাল শেষে সেটা বেড়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ০৪ গ্রাম। জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, ১৯৯৫-৯৬ সালে একজন মানুষের দৈনিক পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ১১ দশমিক ৬ গ্রাম। ২০০০ সালে সেটা ১৫ দশমিক ৪১ গ্রামে দাঁড়ায়। এর ৫ বছর পর ২০০৫ সালে একজনের দৈনিক পেঁয়াজ দরকার হতো ১৮ দশমিক ৩৭ গ্রাম, ২০১০ সালে সেটা বেড়ে হয় ২২ গ্রাম। আর ২০১৬ সাল শেষে চাহিদা আরও বেড়ে হয় ৩১ দশমিক ০৪ গ্রাম।
দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসে চাহিদা প্রায় পাঁচ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৭৬ হাজার টন। উৎপাদনে নানা সংকটের কারণে প্রতিবছরই আট থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে বাংলাদেশ। পেঁয়াজের আমদানি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গেল বছরের চেয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে পেঁয়াজ আমদানি কম হয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে আমদানি হয় ৭৬ হাজার ২৭৬ টন পেঁয়াজ। তবে, ২০১৮ সালের একই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৩১ টন। এ বছরের অক্টোবরে আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩২ হাজার ১২ টন। কিন্তু গেল বছরের একই মাসে আমদানি হয় এক লাখ ৪ হাজার ৮৩ টন। গেল বছরের নভেম্বর মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ৭৭ টন। কিন্তু এ বছরের নভেম্বরে আমদানি নেই বললেই চলে। ভারতের দিকে তাকিয়ে থেকে বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি প্রায় বন্ধই করে দেয় ব্যবসায়ীরা। আর পর্যাপ্ত আমদানি না থাকায় সংকট তৈরি হয়। দেড় মাসেই হু হু করে বাড়ে দাম। যা ক্রেতাকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দেয়।
পেঁয়াজের মূল্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গেল ১৩ আগস্ট দেশের বাজারে দেশি এক কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৫৬ টাকা। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজের কেজি ছিল সাড়ে ২৫ টাকা। কিন্তু ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত। ফলে বাজারে হু হু করে বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। তখন দুই দিনের মধ্যে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম। ভারতীয় পেঁয়াজও বিক্রি হতে থাকে ১০০ টাকার কাছাকাছি দরে। কিছু দিন পরই এক লাফে ডাবল সেঞ্চুরির মুখ দেখে পেঁয়াজ। ওই সময় বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ২০০ টাকা কেজি দরে। এরপরে দাম আরও বেড়ে কেজিতে ২৫০ টাকায় পৌঁছায়।