বিনোদন সংবাদ: বলিউড সুপারস্টার সালমান খানের ‘দাবাং থ্রি’র শুরুতেই ইতিহাস গড়ার সম্ভাবনা ভেস্তে গেছে। অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবি ‘ছাপাক’-এর প্রচারণা বাতিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতের মুসলিমবিদ্বেষী বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল (সিএবি) পাস হওয়াকে কেন্দ্র করে চলমান বিক্ষোভের বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলিউডে।
‘দাবাং’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর)। বিক্ষোভ না চললে এদিন ইতিহাস গড়ে ফেলতো সালমানের নতুন ছবি। বক্স অফিস ইন্ডিয়ার তথ্যানুযায়ী, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় প্রেক্ষাগৃহে দর্শক সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কম থাকছে। এর আগে ‘দাবাং থ্রি’র প্রেস শো বাতিল করা হয়। অবশ্য শুক্রবার সকালে ভারতীয় সাংবাদিকদের ছবিটি দেখিয়েছেন প্রযোজক আরবাজ খান।
এদিকে এসিডদগ্ধ তরুণীর চরিত্রে ‘ছাপাক’ ছবির ট্রেলারে প্রশংসা কুড়িয়েছেন দীপিকা। তিনি নিজেই এর প্রযোজক। গত সপ্তাহে ধুমধাম করে দিল্লিতে এর প্রচারণা করার কথা ছিল তার। কিন্তু চলমান বিক্ষোভে তা বাতিল করেছেন তিনি ও পরিচালক মেঘনা গুলজার।
দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে বলিউড। অভিনেত্রী তাপসী পান্নু বলেন, ‘জামিয়ায় যা দেখেছি তা মোটেও মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীরা তাদের দুর্দশার কথা বলছে এমন ভিডিও দেখে সত্যিই কষ্ট পেয়েছি। আমার মনে হচ্ছে, বড় কিছু ঘটেছে বা বড় কিছু ঘটতে চলেছে।’
আলিয়া ভাট মনে করেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শেখা উচিত সবার। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকেরই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। এজন্য সহিংসতার শিকার হওয়া পুরোপুরি অন্যায়। প্রত্যেকটি কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোই ভারতকে বদলে দেবে।’
অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত, পরিণীতি চোপড়া, সোনাক্ষী সিনহা, ভূমি পেড়নেকর, অভিনেতা-নির্মাতা ফারহান আখতার, ভিকি কৌশল, হৃতিক রোশন, অজয় দেবগণ, আয়ুষ্মান খুরানা, বরুণ ধাওয়ান, অনুরাগ কাশ্যাপ, অনুভব সিনহা, স্বরা ভাস্কর, কমল হাসান, হুমা কুরেশিসহ অনেকে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মন্তব্য, এটি বর্বোরোচিত হামলা। তবে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, আমির খান ও সালমান খান এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করায় সমালোচিত হচ্ছেন।
বিতর্কিত আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন অভিনেত্রী শাবানা আজমি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি এখন ভারতে নেই। এজন্য দুঃখ হচ্ছে। তবে প্রতিবাদকারী সবার প্রতি আমার সমর্থন আছে। কোনও সহিংসতা ছাড়া এই অবস্থান অব্যাহত রাখতে সবাইকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করছি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
আসামের গোয়াহাটি শহরের একটি কলেজে গায়ক জুবিন গর্গ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে রাজপথে অংশ নিয়ে গান গেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আইনটি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে সমবেত হয়েছি। গত কয়েকদিনে আন্দোলনের সময় যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মা শান্তিতে থাকুক। মানুষের সঙ্গে অনুরণন হয় আমার কণ্ঠ। তাই আইনটি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত পাবলিক ফোরামে গান গাইবো।’
জুবিনের পাশাপাশি গোয়াহাটির অস্থায়ী বিক্ষোভ মঞ্চে অংশ নেন আসামের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী, লেখক ও কবিসহ ৪০ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরোধিতা করেছেন তারা। আসামের ৩০টিরও বেশি ছবির অভিনেত্রী বর্ষা রানি বলেন, ‘প্রতিদিন পথে অবস্থান না নিলে আমরা পরাজিত হবো।’
চেন্নাইয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন অভিনেতা সিদ্ধার্থ। সেখান থেকে ৬০০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ভারতীয় টাইমস অব ইন্ডিয়ার দাবি, তাদের মধ্যে আছেন দক্ষিণী ছবির এই তারকা।
২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের বেশ কয়েকজন নাট্যকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংগীতশিল্পী ও অভিনেতারা অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে যুক্ত হিন্দু কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর চাপে তাদের সৃষ্টিকর্মকে সেন্সর কিংবা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে (সিএএ) মুসলিমবিরোধী ও বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বিক্ষোভ চলছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। এ কারণে দেশটিতে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনটিতে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, বলিউড হাঙ্গামা, হিন্দুস্তান টাইমস