বিদেশের খবর: শীর্ষ জেনারেল তথা দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি কাসেম সোলেইমানিকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক হত্যায় ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান। কেবল ইরান নয়, ইরাকে তার জানাজায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন যেখানে আমেরিকার মৃত্যু চেয়ে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
তবে হত্যার একদিন পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতেই সোলেইমানিকে হত্যা করা হয়েছে। আর তেহরান সঠিক সময়ে ও স্থানে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। এদিকে ইরাকে সোলেইমানিকে হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়েছে যাতে ছয় জন নিহত হন। তবে ওয়াশিংটন এই অভিযোগ নাকচ করেছে।—খবর বিবিসি ও ডেইলি মেইলের
ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান :ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর জেনারেল এবং বিপ্লবী গার্ড বাহিনী কুদসের প্রধান কাসেম সোলেইমানি বাগদাদে এক মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হওয়ার পর দেশটির শীর্ষ নিরাপত্তা কাউন্সিল বলেছে, ‘সঠিক সময়ে এবং সঠিক জায়গায়’ এ হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে। নিরাপত্তা কাউন্সিলের ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। সোলেইমানি নিহত হবার পর বিশ্বের নেতৃবৃন্দ উদ্বিগ্ন প্রতিক্রিয়া জানান। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল মাহদি বলেছেন, হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্য এবং তার বাইরেও যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। ঠিক এ আশঙ্কারই প্রতিফলন ঘটে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের প্রতিক্রিয়ায়। গুতেরেস বলেন, উপসাগরে আরেকটি যুদ্ধের ঝুঁকি নেবার মতো অবস্থা বিশ্বের নেই। তিনি রাষ্ট্রনেতাদের সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চায় না, তবে আমেরিকানদের জীবন বিপন্ন হলে চুপ করে থাকবে না। এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, স্রস্টার উদ্দেশ্যে তার যাত্রা, তার পথ বা মিশনকে থামাতে পারবে না, অপরাধীদের জন্য কঠোর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে যারা তার এবং অন্য শহিদদের রক্তে হাত রাঙিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া চিঠিতে ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তাখত রাভাঞ্চি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে তেহরানের। রেভ্যুলিউশনারি গার্ডসর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রমজান শরীফ বলেন, দখলদার ইহুদিবাদী এবং অপরাধীদের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা হবে আরো ব্যাপক। যেহেতু গার্ড বাহিনী নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে এবং অনেকেই সোলেইমানির উত্তরাধিকার বহন করতে আগ্রহী।
তেহরানের প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যম মানুষের জমায়েত সমাবেশ সরাসরি দেখিয়েছে যেখানে ধর্মীয় নেতারা অন্যান্য মুসল্লিদের আশ্বাস দেন যে স্রষ্টার জন্য শহিদ হিসেবে মৃত্যু হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। সেজন্য মহান ব্যক্তিরা প্রাকৃতিক কারণ যেমন ক্যানসার, দুর্ঘটনা বা বার্ধক্যে পৌঁছে মৃত্যুর চেয়ে শাহাদতবরণকে অধিক শ্রেয় মনে করেন।রেভ্যুলিউশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি) এর এলিট ইউনিট কুদস ফোর্স সরাসরি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে জবাবদিহি করত। সেখানে এর নেতৃত্বে থাকা সোলেইমানিকে বীরত্বপূর্ণ জাতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হতো। তিনি ইরানের যুদ্ধ থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রনীতিতেও প্রভাব রাখতেন।
‘আমেরিকার মৃত্যু চাই’
জেনারেল কাসেম সোলেইমানির জানাজায় যোগ দিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি অপারেশনের দেখভাল করতেন সোলেইমানি। বাগদাদে শোক মিছিলে অংশ নেওয়া মানুষজন ইরাকি এবং মিলিশিয়া বাহিনীর পতাকা বহন করে এবং স্লোগান দেয়, ‘আমেরিকার মৃত্যু চাই’। শহরের অনেকগুলো রাস্তা জুড়ে মিছিল চলে। তাদের অনেকের হাতে ছিল সোলেইমানি এবং ইরানের আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ছবি। তার মৃত্যুতে কয়েকদিন ধরে শোক পালন করছে ইরান ও ইরাকের সমর্থকরা। পরবর্তীতে তার মৃতদেহ ইরানে নিয়ে নিজ শহরে দাফন করা হবে।
যুদ্ধ বন্ধ করতেই হত্যা : ট্রাম্প
ঠিক কী কারণে জেনারেল সোলেইমানিকে হঠাত্ করে হত্যা করা হলো, তার কোনো বিস্তারিত কারণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘যুদ্ধ শুরু করতে নয়, বরং বন্ধ’ করতেই ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা সোলেইমানিকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফ্লোরিডায় নিজের মার-এ-লাগো রিসোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী একটি ত্রুটিহীন ও নির্ভুল বিমান হামলা চালিয়েছে যাতে বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী কাসেম সোলেইমানি নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, সোলেইমানি আমেরিকার কূটনীতিক এবং সামরিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই বাজে ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছিলেন, কিন্তু আমরা তার সেই কাজ ধরে ফেলেছি এবং তাকে হত্যা করেছি। ট্রাম্প ফ্লোরিডার একটি মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে দাবি করেন, ইরানে বসেই সোলেইমানি দিল্লি ও লন্ডনে হামলায় মদত দিয়েছিলেন। তবে কোন হামলার পিছনে সোলেইমানির মদত ছিল তা নির্দিষ্ট করে বলেননি ট্রাম্প। গত ২০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে সোলেইমানি অস্থিরতা তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প।