বাবুল আক্তার, পাইকগাছা: ভোলানাথ সুখদা সুন্দরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আম গাছ। এ গাছটিকে ঘিরে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, মন্দির সহ উন্মুক্ত পরিবেশ। অথচ, কালের বিবর্তনে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানগুলির অবকাঠামো উন্নয়নের আংশিক ছোঁয়া লাগলেও গাছটির সুরক্ষাসহ আধুনিক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি আজও। এলাকাবাসীর দাবী সরকারি পৃষ্টপোষকতায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিনোদনের পার্কসহ উন্নয়নের আলোকবর্তিকার অংশ হতে পারে অবহেলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, খুলনার পাইকগাছার উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে খুলনা-পাইকগাছা প্রধান সড়কের পাশেই অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ভোলানাথ সুখদা সুন্দরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯২৩ সালে তৎকালীন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহায়তা নিয়ে বৈদ্যনাথ ঘোষ পিতা-মাতার নাম অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয় ভোলানাথ সুখদা সুন্দরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের শত বছরের গাছটির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস শেষে মুক্ত বাতাসে তার তলায় বসে গল্প করে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ডালগুলিতে বসে ছাত্র-ছাত্রীরা দোল খায়। তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে তাদের মাঝে বিলিয়ে দেয় জ্যৈষ্ঠের পাকা আমগুলি। এ গাছটির তলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩শ বাইসাইকেল তার ছায়ার তলায় রাখে। কালের সাক্ষী শত বছরের আমগাছের সাথে জড়িয়ে থাকা ভোলানাথ সুখদা সুন্দরী বিদ্যালয়ের বয়স ৯৭ বছর। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অবকাঠামো ছিল খুবই নাজুক। সরকার একের পর এক পরিবর্তন হলেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাবেক সাংসদ এ্যাডঃ নুরুল হকের ভাল মনোভাবের কারণে গড়ে উঠেছে কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি ভবন। এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮শ ছাত্র-ছাত্রী, যা উপজেলার মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বর্তমানে সভাপতি মোঃ আজিজুল হক বলেন, আমার আমলে উপজেলার মধ্যে প্রথমেই আমার বিদ্যালয় ডিজিটালাইজড করার জন্য পরিশ্রম করছি। শিক্ষকগণের গুনগত মানোন্নয়নে ডিজিটাল হাজিরা স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি শ্রেণীতে ২টি করে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক সরদার বদিউজ্জামান বলেন, অফিস কক্ষে বসে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মনিটরিং করে থাকি।
গাছটির সাথে কালের সাক্ষী হিসেবে জড়িয়ে রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেদ মন্দির। জমিদার আমলে নির্মিত এ মন্দির প্রতিষ্ঠানটি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা উপাসনা করতেন। এখানে প্রতি বছর চৈত্রের মাসের শেষ তারিখে বৈশাখী মেলা সহ চড়ক পূজা হয়ে থাকে। মন্দিরটি দেখভালের অভাবে বিলিন হওয়ার পথে। এ গাছের সাথে আরো জড়িয়ে রয়েছে বারের পুকুর। ৮০’উর্দ্ধ আজিজ গোলদার জানান, তৎকালীন সময়ে পানীয় জলের অভাবের কারণে জমিদার ভোলানাথ ঘোষ এ পুকুরটি খনন করেন। এ পুকুরটিতে অলৌকিক কিছু দেখা যেত বলে নাম রাখা হয়েছিল বারের পুকুর। সবমিলিয়ে গাছটির সাথে মিলে-মিশে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, মন্দির। গাছটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের বিনোদনের পার্ক প্রতিষ্ঠানের জন্য এলাকাবাসী সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট