মাহাফিজুল ইসলাম আককাজ : সাতক্ষীরা নবারুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে দুদকের উদ্যোগে ‘সততা স্টোর’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির মতবিনিময় সভায় জিয়াউদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে দুদক, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আবুল হাসান এ তথ্য জানান।
এসময় তিনি বলেন, ‘কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের সততার চর্চা করাতেই এ উদ্যোগ। ছোট বয়স থেকে সততার চর্চা করলে পরিণত বয়সে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। তাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক জীবনে এর প্রভাব পড়বে। এভাবেই ধীরে ধীরে আলোকিত সমাজ গড়ে উঠবে।’
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন দুদক খুলনার উপ সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল কাদের, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুর রহমান, নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেক গাজী, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জিয়াউদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন, সহ সভাপতি প্রফেসর শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, মুরশিদা আক্তার, সদস্য ডা. আবুল কালাম বাবলা, মো. আব্দুর রব ওয়ার্ছী, মো. আব্দুর রহমান, জি.এম শফিউল আলম, মরিয়ম মান্নান, রেবেকা খাতুন, তহমিনা ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ‘স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে সততা চর্চার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তত্ত্বাবধানে দেশের প্রতিটি জেলার একটি বালক ও একটি বালিকা বিদ্যালয়ে ‘সততা স্টোর’ চালু করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করেছে দুদক।’ নীতিমালা সূত্রে জানা যায়, ওই স্টোরে বই, খাতা, কলম, জ্যামিতি বক্স, স্কেল, পেন্সিল, ইরেজার, রঙ পেন্সিলসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ও চকালেট, চিপস, বিস্কুটসহ হালকা খাবার সামগ্রী রাখা হবে। বাজার মূল্যে বিক্রি হবে ওইসব সামগ্রী। সততা স্টোরে কোনো বিক্রেতা থাকবে না থাকবে একটি মূল্য তালিকা। এই মূল্য তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নির্ধারিত টাকা ক্যাশ বাক্সে রেখে যাবে। এরই অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে চালু করা হবে ‘সততা স্টোর’। সততা স্টোর পরিচালনায় স্কুলের শিক্ষকদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে সহায়তা করবে স্থানীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি। দুদক সচিব স্বাক্ষরিত ‘সততা স্টোর’ নীতিমালা সম্পর্কিত চিঠি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলার ১৬৮টি স্কুলে এমন স্টোর চালু করা হবে। নীতিমালায় বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে সততা স্টোরের পুঁজি সংগ্রহ ও বিনিয়োগ করবে। নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের স্টোরে প্রবেশের সময় রেজিস্টার খাতায় নাম, শ্রেণি, রোল নম্বর লিখতে হবে। পণ্যের মূল্য তালিকা দেখে স্টোরে রাখা ক্যালকুলেটরে হিসাব করে কাগজে পণ্যের নাম ও টাকার পরিমাণ লিখে নির্দিষ্ট টাকা ক্যাশ বাক্সে রাখতে হবে। স্টোরে চাহিদামতো পণ্য না পাওয়া গেলে প্রি-অর্ডার বুকে লিখে অর্ডার দেওয়া যাবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ও মহানগর, জেলা, উপজেলার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বা সম্পাদক কর্তৃক গঠিত কমিটি স্টোর পরিচালনা করবে। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি নেই সেখানে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক মনোনীত তিনজন শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি স্টোর পরিচালনা করবে। স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে এটি চালু করতে হবে। মতবিনিময় সভায় জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট