নিজস্ব প্রতিবেদক: আশাশুনি উপজেলার কামালকাটিতে শালখালী খাল ও মরিচ্চাপ নদী পুনঃখননে বাধা সৃষ্টি, লাঠিশোঠা নিয়ে খনন কার্যক্রমের দায়িত্বে নিয়োজিতদের উপর হামলা ও চাঁদাবাজির ঘটনায় মমতাজ খাতুন (৪২) নামের এক মহিলা ইউপি সদস্যা এবং তার ছেলে মহিউদ্দীন (৩২) গ্রেপ্তার করেছে আশাশুনি থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত মমতাজ খাতুন আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যা এবং কান্দুড়িয়া গ্রামের কাছেদ আলীর স্ত্রী। বৃহষ্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে কামালকাটি বাজার সন্নিকটে কামালকাটি শ্মশানঘাট এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুস সালাম জানান, শালখালী খাল ও তৎসংলঘ্ন মরিচ্চাপ নদী পুনঃখননে বাধা সৃষ্টি, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনের কাছে ২লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী, খননকাজে নিয়োজিতদের উপর হামলা ও মারপিটের ঘটনায় বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফিরোজ তালুকদার বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনাতা ১০/১২ জনকে আসামী করে আশাশুনি থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামী হিসেবে মহিলা ইউপি সদস্যা মমতাজ খাতুন ও তার ছেলে মহিউদ্দীনকে বৃহষ্পতিবার সকালে গ্র্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্র্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বুধহাটা ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান ও তার ভাইদের দখলকৃত জমির উপর দিয়ে পুনঃখননের নকশা হওয়ায় এবং মহিলা মেম্বারের অবৈধ ২টি ইটের পাঁজার উপর দিয়ে একই ভাবে তার আত্মীয়-স্বজনের দখলকৃত সম্পত্তির উপর দিয়ে বহমান নদী এবং নদী খননের নতুন নকশা প্রবাহিত হওয়ার কারণে তাদের ব্যক্তিগত আন্দোলনকে এলাকার সাধারণ মানুষের আন্দোলন দেখিয়ে বহুদিন থেকে তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে আসছিলো। আর এ আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার জন্য অসহায় খেটে খাওয়া মানুষ গুলো থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র এসও সাইদুর রহমান জানান, নাব্যতা সংকটে থাকা দেবহাটার সাপমারা খালের ১৯ কিলোমিটার, আশাশুনী অংশে শোভনালী ইউনিয়নের শালখালী খালের সাড়ে ৪ কিলোমিটার এবং সংযুক্ত মরিচ্চাপ নদীর এক হাজার মিটার পুনঃখনন কার্যক্রম চলমান অবস্থায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে মহিলা ইউপি সদস্যা মমতাজ খাতুন, তার ছেলে মহিউদ্দীন সহ কয়েকজন ২লক্ষ টাকা চাঁদাদাবী করেন।
কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বুধবার দুপুরে কামালকাটি শ্মশান এলাকায় ইউপি সদস্যা মমতাজ খাতুন, তার ছেলে মহিউদ্দীন, ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান, মহিলা সদস্যের স্বামী কাছেদ আলী, স্থানীয় খোরশেদ আলী, সাহান আলীসহ অজ্ঞাত ব্যাক্তিরা লাঠিশোটা নিয়ে বাধা সৃষ্টি ও খনন কাজে নিয়োজিত লোকজনদের মারপিট করে।
পরবর্তীতে সরকারী খাল খননের কাজে বাধা সৃষ্টির ঘটনায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফিরোজ তালুকদার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে মমতাজ খাতুন ও মহিউদ্দীনকে গ্রেপ্তার করে আশাশুনি থানা পুলিশ।
এদিকে বৃহষ্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল কামালকাটির খাল খনন চলমান এলাকা পরিদর্শন করেন সাতক্ষীলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম চক্রবর্তী, আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুস সালাম সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা।
এসময় নেতৃবৃন্দরা বলেন, সরকারী খান খনন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। পাশাপাশি সুষ্ঠভাবে খাল খনন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ইতোপুর্বেও কামালকাটির পাশ্ববর্তী স্থানে খাল খননে বাধা সৃষ্টির ঘটনায় আরেকটি মামলা দায়ের করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই মামলার আসামী পুর্ব কামালকাটি গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৫)কে আগেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পূর্ববর্তী পোস্ট