বিদেশের খবর: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) এর বিরোধিতায় শুরু হওয়া আন্দোলনের জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। এই আইনের পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা মানুষদের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘর্ষের জেরে হিংসা ছড়িয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিস্তীর্ণ জায়গায়। এর ফলে ইতিমধ্যেই ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। জখম হয়েছেন আরও ২০০ জনের বেশি মানুষ।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে এই বিষয়ে কেন্দ্র ও দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে কংগ্রেস। রাষ্ট্রপতির কাছে রাজধর্ম পালনের আবেদন রেখেছে। বিজেপি বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলিও দিল্লিতে হিন্দু এবং মুসলিমদের মধ্যে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ তুলেছে।
এর মাঝেই প্রতিবেশী ছয় জন মুসলিমকে আগুন থেকে রক্ষা করতে গিয়ে ভয়াবহভাবে পুড়ে গিয়েছেন দিল্লির এক বাসিন্দা প্রেমকান্ত বাঘেল। শরীরের ৭০ শতাংশ পোড়া অবস্থায় বর্তমানে দিল্লির জিটিবি (GTB) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় হিংসা ছড়ালেও শিব বিহার এলাকাতে শান্তি বজায় ছিল।
এখানকার হিন্দু ও মুসলিম বাসিন্দারা কোনোরকম প্ররোচনায় পা দিয়ে গণ্ডগোলে জড়াননি। কিন্তু, মঙ্গলবার রাতে আচমকা ওই এলাকার কিছু মুসলিম বাসিন্দার বাড়িতে পেট্রল বোমা মারতে শুরু করেন কিছু দুষ্কৃতী। এর ফলে বেশ কয়েকজনের বাড়িতে আগুন লেগে যায়।
এই খবর শোনার পরেই তাদের বাঁচাতে ছুটে যান প্রেমকান্ত বাঘেল। ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানতে পারেন তাঁর এক বন্ধুর বৃদ্ধা মা ও আরও কয়েকজন মানুষ তাঁদের বাড়িতে আটকে পড়েছেন। সেখানে ভয়াবহ আগুন লেগে যাওয়ায় কেউ তাঁদের উদ্ধার করতে যাচ্ছিল না। কিন্তু, এই কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারেননি প্রেমকান্ত। আশপাশের সবাই বারণ করলেও জ্বলন্ত বাড়ির মধ্যে ঢুকে গিয়ে বন্ধুর বৃদ্ধা মা-সহ মোট ৬ জনকে বাইরে বের করে আনেন।
এই ঘটনার ফলে ওই ছয় জনের খুব একটা ক্ষতি না হলেও আগুনে মারাত্মকভাবে জখম হন তাঁদের রক্ষাকর্তা প্রেমকান্ত। শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে যায় তাঁর। সবথেকে দুঃখের কথা হল, নিজের জীবন বিপন্ন করে ছয় জনকে বাঁচালেও প্রেমকান্তকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর কাউকে পাওয়া যায়নি। ফলে সারারাত ধরে নিজের বাড়ির মাটিতে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে বাধ্য হন তিনি। পরে সকাল হলে তাঁকে স্থানীয় জিটিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন