বিদেশের খবর: ইতালিতে করোনাভাইরাসে একদিনে ৩৬৮ জন মারা গেছেন। ইউরোপের সুন্দর এ দেশটি এখন এক কথায় মৃত্যুপুরী।
রোববার ২৪ ঘণ্টায় এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে ওই রেকর্ডসংখ্যক মানুষের মৃত্যুতে জনমনে আরও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
এর আগে গত শুক্রবার মারা গিয়েছিল ২৫০ জন। মহামারী করোনাভাইরাসে এ নিয়ে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ৮০৯ জনে।
একদিনে ওই রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে ভাবিয়ে তুলল দেশটির সরকার ও জনগণকে।
করোনার বিস্তার ঠেকাতে ইতালি সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। গোটা ইতালি এখন কোয়ারেন্টাইনে পরিণত হয়েছে।
মহামারী করোনাভাইরাস বিস্তারের কেন্দ্র এখন ইউরোপ। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি ইতালিতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। রোববার আকস্মিকভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেল। একই সঙ্গে বেড়েছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। রোববার একদিনে আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ৫৯০ জন।
এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত ২৪ হাজার ৭৪৭ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ২০ হাজার ৬০৩ জন।
তাদের মধ্যে ১৮ হাজার ৯৩১ জনের অবস্থা স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে এবং বাকি এক হাজার ৬৭২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই হাজার ৩৩৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যা অনুপাতে মৃত্যুর হার ৪৪ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৫৬ শতাংশ।
ইউরোপের দেশটিতে দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে ইতালিতে জরুরি অবস্থা জারি করে পুরো দেশকে লকডাউন করা হয়েছে।
ফার্মেসি ও খাবার দোকান ছাড়া সব কিছু বন্ধ রয়েছে। ফলে গোটা ইতালি থমকে আছে। অর্থনৈতিক অবস্থা অবনতির দিকে।
নতুন করে কোনো পর্যটক ইতালিতে প্রবেশ করতে পারছে না। বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। জরুরি অবস্থায় যানবাহনও আগের মতো চলাচল করছে না। বেড়েছে যাত্রী দুর্ভোগ।
সরকার নির্দেশনা দিয়েছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে কেউ যেন না যায়। ইতালির প্রধনামন্ত্রী জিউসেপ কন্তে করোনার মহামারী সামাল দিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছেন।
করোনাভাইরাসে রোমের ক্লোসিয়াম, ফোনতানা ত্রেভি, ভেনেসিয়াসহ দর্শনীয় স্থানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইতালির মানুষ এখন কার্যত বন্দি জীবনযাপন করছেন।
সুপার মার্কেটগুলোতে একসঙ্গে সবাইকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলছে সরকার ঘোষিত প্রতিষ্ঠান। কিছু কিছু সুপার মার্কেট ও ক্লিনিকে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
অন্যদিকে ইতালিজুড়ে মাস্কের প্রচণ্ড অভাব দেখা দিয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, আগামী সপ্তাহে আসতে পারে নতুন মাস্ক। তবে নিশ্চয়তা দিতে পারেনি কেউ।
করোনার ভয়াবহতায় গোটা ইতালিই এখন ফাঁকা। সরকার নতুন ডিক্রি জারি করে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।
সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা নেই। বিভিন্ন স্থানে প্রশাসন রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করছে। যানবাহন ও চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আনতে নিরাপত্তা জোরদার রাখা হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, সচেতনতার অভাবে এখনও যারা রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ইতালি প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি নাগরিককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিয়ম মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সবাইকে আপাতত বাসা থেকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন।