ডেস্ক: কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, ভাত না কি রুটি – এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। পুষ্টিবিদরা কিছু ক্ষেত্রে ভাতকে প্রাধান্য দেন, আবার কিছু ক্ষেত্রে রুটি। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এ দ্বিধায় পড়েন। বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে যেমন ডায়াবেটিস, কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার বেশ প্রভাব ফেলে। ভাত এবং রুটি সম্পর্কে কিছু বিষয় জানলেই বুঝতে পারবেন ওজন কমাতে কোনটি বেশি সহায়ক।
খাদ্যগুণ বিচার করতে গেলে একদিক থেকে ভাতের চেয়ে আটার রুটি বেশি ভালো। কারণ রুটি অনেক বেশি তাপশক্তি বা ক্যালরি উৎপাদন সক্ষম। যেমন, আধা ছটাক চাল থেকে পাওয়া যায় ১০২.১ ক্যালরি আর আধা ছটাক আটা থেকে পাওয়া যায় ৯৬.৪ ক্যালরি। কিন্তু যখনই রান্না হয়, তখন দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। চাল থেকে যখন ভাত তৈরি হলো তখন চালের ক্যালরি ১০২.১ থেকে নেমে দাঁড়ায় ৫৬.৭। অথচ আটার ক্যালরি ৯৬.৪ রুটি হয়ে দাঁড়ায় ১০১.২।
সাদা ধবধবে চালের প্রতি মানুষের দুর্বলতা। কিন্তু বেশি-ছাঁটা চালে ভিটামিন কম থাকে। আবার যখন ভাতের মাড় বা ফ্যান ফেলে দিয়ে রান্না করা হয় তখন বাদ পড়ে যায় প্রোটিন, খনিজ লবণ ও ভিটামিনের বড় একটা অংশ। গমের তুষের ক্ষেত্রেও একই ভুল করা হয়। আটা চেলে নিয়ে রুটি বানানো হয়। অথচ গমের তুষে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন থাকে।
সবদিক বিচার করে পুষ্টিবিদরা বলেছেন, প্রতিদিনই দুই ধরনের খাদ্যশস্য যেমন ভাত-রুটি মিশিয়ে খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ভাত হলো কম ছাঁটা চালের আর রুটির ক্ষেত্রে তুষযুক্ত আটার রুটি।
ভাত-রুটির প্রসঙ্গে এদের অন্তর্গত সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সম্বন্ধে জেনে নিন–
ভাতে পানি দিয়ে রাখলে অর্থাৎ পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স তৈরি হয়। তবে পান্তা ভাত ধুয়ে নিয়ে খেলে উপকার হবে না, ভেজানো পানিসহই খেতে হবে। রুটি করার সময়ও একটু বেশি পানি দিয়ে আটা মেখে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে তারপর রুটি করতে হয়। এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স তৈরি হয়। মাখা আটার লেচি অল্প একটু তুলে রেখে পরের দিন আটা মাখার সময় সেটা মিশিয়ে নিতে হয়। এভাবে রুটিতেও ভিটামিন ‘বি কমপ্লেক্স’ তৈরি হয়।
চাল ও গমের আটার পুষ্টিগুণ প্রতি ১০০ গ্রাম মেশিনে ছাঁটা চালে রয়েছে – এনার্জি ৩৪৫ কিলোক্যালরি প্রোটিন ৬.৪ গ্রাম ফ্যাট ০.৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ৭৯.০ গ্রাম ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস ১৩৬ মিলিগ্রাম আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ ০.২১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২ ০.০৯ মিলিগ্রাম নিয়াসিন ৩.৮ মিলিগ্রাম তবে আতপ চালের চেয়ে সেদ্ধ চালে পুষ্টি বেশি।
বিশেষ করে সেদ্ধ চালে ভিটামিন বি১ এবং কিছু খনিজ পদার্থ বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম গমের আটায় রয়েছে – এনার্জি ৩৪১ কিলোক্যালরি প্রোটিন ১২.১ গ্রাম ফ্যাট ১.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ৬৯.৪ গ্রাম ক্যালসিয়াম ৪১ মিলিগ্রাম ফসফরাস ৩৭২ মিলিগ্রাম আয়রন ৩.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ ০.৫৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২ ০.১২ মিলিগ্রাম নিয়াসিন ০.৩ মিলিগ্রাম।
সার্বিক বিবেচনায় বলা যায় খেলে সবকিছুই আপনার স্বাস্থ্য বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণ যেকোনো খাবার আপনার সুস্বাস্থ্য গঠনে সাহায্য করবে পাশাপাশি রোগমুক্তিতেও সাহায্য করবে।