ডাক্তার নার্সসহ সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীর মুখ বন্ধ করা হয়েছে, কিন্তু করোনা আক্রান্ত অসহায় রোগীদের এবং তাঁদের আত্মীয় স্বজনদের মুখ বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিদিন শত শত অভিযোগ।
কোভিড-১৯ জন্য সজ্জিত কোন হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। ডাক্তার-নার্স সহ সংশ্লিষ্ট অন্যরাও নাকি অতোটা যত্নবান নন। আসলে যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ঢাল তলোয়ার ছাড়া তাঁরাই (স্বাস্থ্য কর্মীরা) বা কিভাবে লড়বেন।
এই ভাইরাস শনাক্ত করে পজিটিভ আসা মানে যেন মহা পাপ করা । অচ্ছুৎ অস্পৃশ্য হলেও কিছুতেই সে পাপী তো নয়, কিন্তু পদে পদে বিপদ। মাত্র কয়েকদিন আগে করোনা রোগীদের বাড়ি ঘেরাও করে ভাংচুর করতে দেখেছি। মৃত্যুর পর কবর না দেওয়ার জন্য আবারও প্রতিরোধ।
অনেকে আবার নিজের মা,বাবা, স্ত্রীকে করোনা সন্দেহে অচেনা জায়গায় রাস্তায় ফেলে রেখে যাচ্ছেন। এটা কি বলবো অমানবিকতা নাকি মতিভ্রষ্ট !
যদিও সংক্রামিত ৮০% মানুষ অতোটা অসুস্থ না হয়ে এমনিতেই ভালো হয়ে যান। অনেক ক্ষেত্রে রোগ ঠিক ওইভাবে প্রকাশও পায় না। কিন্তু যদি ২০% এর মধ্যে পরে যায় কেউ তাহলেই সমূহ বিপদ।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফ থেকে বার বার বলা হচ্ছিল তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে, কার্যত চিকিৎসা ব্যবস্থার চরম দৈন্যতা আর অনিয়মই প্রকাশিত হচ্ছে। অপ্রতুল মাস্ক আর পিপির জন্য ডাক্তাররা প্রথম দিকে রোগীদের কাছে যেতেই অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এটা তাঁদের দোষ নয় কিন্তু এ পর্যায়ে করোনাবিহীন অন্য রোগাক্রান্ত মানুষও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ক্ষমতার চেয়ে প্রতিদিন তিনগুণ রোগী পরীক্ষা করাতে যায়। দুদিন আগে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সিরিয়াল না পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায়ই লুটিয়ে পরে মারা গেলো একজন বয়স্ক মানুষ।
লাইনে দাঁড়ানো সবাই যে করোনা আক্রান্ত তাও নয় কিন্তু লাইনে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সাথে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাঁরাও অনেকে সংক্রমিত হচ্ছেন রোগ নিয়ে বাসায় ফিরছেন।
উন্নত দেশগুলোতে দেখেছি বাসায় যেয়ে রোগীর স্যাম্পল কালেক্ট করে, পরে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়G এই পরীক্ষা ব্যবস্থারও পরিবর্তন করা জরুরী ।
গত চার দিনে ঢাকা মেডিক্যালে করোনা সন্দেহে ২৮ জনের মৃত্যু হলেও জীবিত অবস্থায় তারা করোনা টেস্টের সুযোগ পাননি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মৃত্যুর পর শনাক্ত হয় রোগী করোনা আক্রান্ত ছিল।
যে কোন মৃত্যুই কষ্টের তবুও অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় প্রেস ব্রিফিং এ কম সংখ্যক রোগীর মৃত্যু সংবাদ খানিকটা স্বস্থি দিলেও করোনা উপসর্গ নিয়ে সারা দেশের অসংখ্য মৃত্যু আতংকিত করছে। অনেক বড় বড় জেলা শহরেও করোনা টেস্টে প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি নেই। জামালপুরে করোনা টেস্টের জন্য ময়মেনসিংহ হাসপাতালে স্যাম্পল পাঠাতে হয়।
উন্নত দেশগুলোতে অল্প সংখ্যক মানুষের জন্য নিয়মিত লাখ লাখ টেস্ট হচ্ছে সেখানে আমাদের ১৮ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ৬২৪১ জন।
টেস্ট বাড়ানো না গেলে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সঠিক তথ্য আমরা পাবো না, সেই সাথে চারপাশে করোনা উপসর্গে সর্দি-কাশি-জ্বর আর শ্বাসকষ্টে মৃত্যু দেখে জনমনে অবিশ্বাস, সন্দেহ আর শঙ্কা এসে দানা বাঁধবে।
ইতিমধ্যে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী কাল থেকে মসজিদ, মার্কেট সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি অফিস গুলোও খুলবে খুলবে করছে। কার্যত লক ডাউন আর ওইভাবে থাকছে না। এই মুহূর্তে টেস্ট না বাড়াতে পারলে আমাদের জন্য আরও বড় দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে।
লেখক: সম্পাদক, পূর্বপশ্চিম