দেশের খবর: দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯), যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৪০৮ জন মারা গেলেন। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৭৭৩ জন, এটিও একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৮ হাজার ৫১১ জনে।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্তে আরও ১০ হাজার ১৭৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১০ হাজার ২৬২টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো দুই লাখ ১৪ হাজার ১১৪টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ৭৭৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার ৫১১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ২২ জন। এদের ১৯ জন পুরুষ, তিনজন নারী। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৩৯৫ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ হাজার ৬০২ জনে।
নতুন করে যারা মারা গেছেন, তাদের ১৯ জন পুরুষ, তিনজন নারী। বয়সের দিক থেকে ১১ থেকে ২০ বছরের দুজন, ত্রিশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব দুজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১০ জন, ষাটোর্ধ্ব তিনজন, সত্তরোর্ধ্ব দুজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী দুজন। এদের ১০ জন ঢাকা বিভাগের, আটজন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন সিলেট বিভাগের এবং একজন ময়মনসিংহ বিভাগের। ঢাকা বিভাগের মধ্যে রাজধানীর আটজন, ঢাকা জেলার একজন ও নারায়ণগঞ্জের একজন বাসিন্দা ছিলেন। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার চারজন, চাঁদপুরের তিনজন ও কক্সবাজারের একজন ছিলেন। সিলেট বিভাগের মধ্যে সিটি করপোরেশনের একজন এবং অন্যান্য জেলার দুজন ছিলেন। আর ময়মনসিংহ বিভাগের যিনি মারা গেছেন তিনি ময়মনসিংহ শহরের বাসিন্দা ছিলেন।
গত বুধবারের (২০ মে) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জন মারা গেছেন। ১০ হাজার ২০৭টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৬১৭ জনের দেহে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত এবং শনাক্ত- উভয় সংখ্যা শুধু বাড়েইনি, হয়েছে রেকর্ডও। এর আগে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল ২১ জনের। এ তথ্য জানানো হয় গত ১৮ মের বুলেটিনে।
বৃহস্পতিবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ১৫৪ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন তিন হাজার ৮৯৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭৩ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন এক হাজার ৯৬৬ জন।
সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা আছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। তন্মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে আছে ছয় হাজার ৩৪টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা আছে ৩৯৯টি, ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০৬টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে চার হাজার ৩২ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৫৯১জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ এক হাজার ১৫২ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৪ হাজার ৩৮২ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৮৪০ জনকে।
ডা. নাসিমা করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান বুলেটিনে।
চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৫১ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা সোয়া তিন লাখেরও বেশি। তবে ২০ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। তারপর দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও।