খেলার খবর: পুলিশি হেফাজতে সাবেক কৃষ্ণাঙ্গ বাস্কেটবল তারকা জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর উত্তাল হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শেতাঙ্গ পুলিশের হাতে তিনি খুন হওয়ার প্রতিবাদে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো ফুঁসে উঠেছেন কালো বর্ণের মানুষগুলো। টানা সাত দিন ধরে সেখানে তীব্র বিক্ষোভ চলছে। ক্রমেই তা সবার সমর্থন পাচ্ছে এবং সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।
পিছিয়ে নেই আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনও। বিশ্বের প্রথম সারির ক্রীড়াবিদরাও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। এবার সেই সুরে কণ্ঠ মেলালেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল।
মার্কিনমুলুকের মিনোপোলিসের নারকীয় ঘটনার রেশ টেনে তিনি জানালেন, কমবেশি সব খেলাতেই বর্ণবিদ্বেষ দেখা যায়। ফুটবলে এর মাত্রা সবচেয়ে বেশি। তবে ক্রিকেটেও গায়ের রঙ নিয়ে প্রায়শই কৃষ্ণাঙ্গদের টিপ্পনি শুনতে হয়। এমনকি বিভিন্ন সময়ে তাকেও একাধিকবার বর্ণবাদের শিকার হতে হয়েছে।
ক্রিকেট মাঠে বর্ণবিদ্বেষ চোখে পড়ে। বহু ক্ষেত্রে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিছু দিন আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জাতিবিদ্বেষের শিকার হন ইংল্যান্ড তারকা জোফরা আরচার। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী দর্শককে শাস্তি দেয় কিউই ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি)।
এবার একই মাধ্যমে রাগ প্রকাশ করলেন গেইল। ইনস্টাগ্রামে নিজের স্টোরিতে তিনি লেখেন– শেতাঙ্গদের মতো কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনেরও মূল্য রয়েছে। কালো মানুষরাও দামি। বর্ণবাদী মানুষগুলো নিপাত যাক। গায়ের রঙ কালো মানুষকে বোকা ভাবা বন্ধ হোক।
ক্যারিবীয় ব্যাটিংদানব বলেন, কৃষ্ণাঙ্গদের অনেকেই সবসময় নিজেদের ছোট ভাবে, খাট করে দেখেন। বলব– তারা হীনমন্যতায় ভোগা বন্ধ করুক। আমি কালো বলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের শিকার হয়েছি। বিশ্বাস করুন, এটা সমানে চলে এসেছে।
দ্য ইউনিভার্স বস আরও লেখেন, বর্ণবাদ শুধু ফুটবলে নেই, ক্রিকেটেও রয়েছে। এমনকি কালো বলে নিজের দলে আমাকে কোণঠাসা হতে হয়েছে। আমি কৃষ্ণাঙ্গ ও শক্তিশালী। এ জাতি, সম্প্রদায় ও গোত্রের মানুষ হিসেবে গর্বিত।
গেল ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রসিদ্ধ শহর মিনোপোলিসে সিগারেট কিনতে যান ফ্লয়েড। তার কাছে জালটাকা আছে সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে ৪৬ বছর বয়সী আফ্রিকান-আমেরিকান বংশোদ্ভূত এ খেলোয়াড়ের গলা হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেন পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক ছভিন। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
এর পর প্রতিবাদে ফেটে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের কতিপয় শহরের কৃষ্ণাঙ্গ বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে কয়েক ডজন দোকানপাট পুড়িয়ে ফেলেছেন তারা। একই সঙ্গে মালামাল লুট করেছেন। সেই জেরে গেল শুক্রবার ছভিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থার্ড-ডিগ্রি মার্ডার এবং সেকেন্ড-ডিগ্রি মানুষ হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু গায়ের রঙ কালো হওয়ায় দোষ না থাকা সত্ত্বেও ফ্লয়েডকে নিমর্মভাবে হত্যা করেছে সাদা ‘চামড়ার‘ পুলিশ সদস্য ছভিন। এতে তথাকথিত সবচেয়ে সভ্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এখনও বর্ণ ও জাতিবৈষম্য বিরাজমান তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
প্রতিবাদে সরব হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষগুলো। সেই ‘যুদ্ধে’ শামিল হচ্ছেন তারকা খেলোয়াড়রা। এরই মধ্যে এ নারকীয় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন টেনিস কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস ও কোকো গফ। ধিক্কার জানিয়েছেন দেশটির বাস্কেটবল মহাতারকা লেব্রন জেমস ও মাইকেল জর্ডান। এর ন্যায়বিচার চেয়েছেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে। এরা সবাই কালো বর্ণের।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস