নিজস্ব প্রতিনিধি : ছেলে মেয়ের লেখাপড়ায় স্কুলের বেতন অন্যদিকে মাছের কাজ করে দিনমজুরি দিয়ে কষ্টের সাথে সংসারের চালান বাবা। বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা। ঘরে চাল থাকতো না অধিকাংশ সময়।বাবার উপার্জন কম। এ রকম আরও ডজনখানেক সমস্যা যখন সম্মুখে তখন পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়ার ইচ্ছা করেছিল গোলক চন্দ্র সরদার ।
মেধাবী ছাত্র গোলক জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫, সঙ্গে বৃত্তি পেয়েছে সে। তাই কষ্ট হলেও তখন সে পড়ালেখা ছাড়েনি। বাবার সহযোগিতার করে অন্যের জমিতে মজুরি খেটে শত কষ্ট সহ্য করেও পড়ালেখা চালিয়ে গেছে। কষ্ট আর চেষ্টার ফল পেয়েছে গোলক। এবারের ২০২০ এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ভামিয়া পশ্চিম পোড়াকাটলা গ্রামের শ্রী সুখেন্দ্র নাথ সরদারের ছেলে গোলক চন্দ্র সরদার৷
শ্যামনগর উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া পি এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী গোলক। সায়েন্স বিভাগ থেকে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে। এতে খুশি গোলক ও তার পরিবার।
গোলক সবকটি বিষয়ে এ প্লাস পেয়ে মোট নম্বর পেয়েছে ৯৯৯। স্কুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর তার। এছাড়াও আরও তিনজন ওই স্কুল থেকে এ প্লাস পেয়েছে।
গোলক সরদার জানান, তার এ অর্জন অনেক কষ্টের। স্কুল থেকে বাড়িতে এসে পড়ার জন্য খুব কম সময় পেয়েছে সে। বাবার সাথে মৎস্য কৃষি কাজ, কখনও আর্থিক অনটনে পরের জমিতে দিনমজুর হিসেবে অন্যের কাজ করতে হয়েছে তাকে এরই মাঝে লেখাপড়া করেছে।
গোলক আরও জানায়, নতুন নতুন স্কুল ড্রেস নতুন পোশাক কিনে দেয়ার সামর্থ্য ছিল না তার বাবার। অন্য বন্ধুদের বাবা-মা তাদের পকেট খরচ দিত, তবে তার বাবা-মা পারতো না। কান্না এসেছে অনেক। তবে এসএসসির ফলাফলে সেসব কষ্ট ধুয়ে গেছে।
শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গোলক জানায়, শিক্ষকরা তাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। এছাড়াও তার কাকা খোকন সরদার তার মামা তাকে অনেক সহযোগিতা করেছে।
গোলকের মা কবিতা রানী সরদার ছেলের এমন অর্জনের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, টাকা ও কাজের জন্য অনেক সময় প্রাইভেট পড়তে, স্কুলে যেতে পারেনি গোকল৷ মাঝে মাঝে ক্ষেত খামারে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাজ করতে যেত। ও অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে। ইচ্ছা আছে ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর। তবে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে হয়তো সেটি সম্ভব হবে না।
গোলকের বাবা শ্রী সুরেন্দ্র নাথ সরদার জানান, আমার কৃষি কাজে অনেক সময় দিয়ে সহযোগিতা করতো গোলক। দিনের অধিকাংশ সময় কাটতো পরিশ্রমে তার। তবে রাতের বেলা মনোযোগ দিয়ে পড়তো সে । এমনও হয়েছে দিনের বেলা কাজ করেছে আর সারা রাত পড়েছে।
ঠাকুরমা রানী ও ঠাকুর দাদা শ্রী দীনেশ চন্দ্র সরদার বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যা আছে তবুও তাকে দাদু ভাইকে বলেছি তুমি পড়ালেখা চালিয়ে যাও। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তারা।
কাকা খোকন সরদার বলেন, গোলক চিন্তিত ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে। এমন অর্থনৈতিক দৈন্যতায় গোলককে ভালো কলেজে ভর্তি করানো ও ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পুরন করতে খরচ বহন নিয়ে চিন্তিত রয়েছে বাবা-মা৷