অনলাইন ডেস্ক: মাথায় আঘাত পেয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অসুস্থ এক বৃদ্ধ চিকিৎসা পেতে চারটি হাসপাতালে যান। কিন্তু প্রতিটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না দিয়ে বৃদ্ধকে ফিরিয়ে দিলে স্ত্রী-সন্তানদের চোখের সামনেই মৃত্যু হয় তার।
চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়া ওই বৃদ্ধের নাম হাজী মো. এনায়েত উল্যাহ (৭২)। বৃহস্পতিবার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাওয়ার পথে হাসপাতাল গেটেই তার মৃত্যু হয়।
বৃদ্ধের ছেলে সোহেল ও মেয়ে রিনা বলেন, কয়েক দিন আগে বাবা মাথায় আঘাত পেলে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। বৃহস্পতিবার হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল ১০টা থেকে তাকে নিয়ে রূপসীর বরপা ইউএস, ডেমরার সানারপাড় ও ঢাকা মেডিকেলে যাই। এসব হাসপাতাল বাবাকে ভর্তি নেয়নি। বিকাল ৩টার দিকে বাবাকে নিয়ে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে যাই। সেখানে জরুরি বিভাগে থাকা নার্সরা প্রথমে ভর্তি নেবেন না বলে মানা করে দেয়। পরে বহু আকুতি-মিনতি করলে একটি শর্তসাপেক্ষে ভর্তির জন্য রাজি হন তারা।
তারা বলেন, তিনি করোনা রোগী না হলেও হাসপাতালে ভর্তির পর মারা গেলে সরকারি নিয়মানুযায়ী লাশ আপনাদের কাছে দেয়া হবে না। লাশ আঞ্জুমান মফিদুলে হস্তান্তর করতে হবে। এমন শর্ত দেয়ায় আমরা বাবাকে ভর্তি করাতে রাজি হইনি। কিন্তু এরই মধ্যে বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকি– ও ডাক্তার সাহেব একটু আসেন। দয়া করে আমার বাবাকে বাঁচান, আমার বাবা মরে যাচ্ছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোহেল বলে, প্রায় ২০ মিনিট ধরে চিৎকার দিয়ে ডাক্তারদের ডাকি। কিন্তু কোনো ডাক্তার বা নার্স সাড়া দেননি। একপর্যায়ে বাবা মারা যান। পরে লাশ নিয়ে ডেমরার বাসায় চলে যাই আমরা।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় একই রকম ঘটনা ঘটে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে।
বুকে প্রচুর ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন নুরে আলম নামে এক ব্যক্তি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা কিছু ওষুধ লিখে তাকে বাসায় চলে যেতে বললে তিনি তাকে ভর্তি করতে বারবার অনুরোধ করতে থাকেন। কিন্তু তাকে ভর্তি করতে রাজি হচ্ছিলেন না জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
এ সময় এ প্রতিবেদক তাদের কাছে জানতে চান, কী কারণে এ রোগীকে ভর্তি নিতে চান না?
জবাবে তারা বলেন, এ হাসপাতালে এখন শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা হয়। সে কারণে তাকে ভর্তি নেয়া হচ্ছে না।
তিনি তো করোনা রোগীও হতে পারেন এমন প্রশ্নের পর অবশেষে তাকে ভর্তি করা হয়।
তবে হাজী মো. এনায়েত উল্যাহর মতো সেই একই শর্ত দেয়া হয় তাকে– মারা গেলে আঞ্জুমান মফিদুলে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
আর সে শর্ত মেনেই রোগী নুরে আলম নিজেই স্বাক্ষর দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ বিষয়ে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে করোনা রোগীদের ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। কতজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বা এখন কত সিট খালি আছে এসব তথ্যাদি জানতে চাইলে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনে যোগাযোগ করুন।
তার কথামতো সেখানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
সূত্র: যুগান্তর