আসাদুজ্জামান : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থেকে জব্দকৃত ৪৮ মেট্রিক টন সরকারি গম অবশেষে আদালত কর্তৃক ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত আশাশুনি ও শ্যামনগরের ৬ টি ইউনিয়নের দুর্গত মানুষের মাঝে বিতরণ করার জন্য যুগান্তকারী আদেশ দেয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরায় পুলিশের জব্দকৃত ৮১৭ বস্তা গম সাইক্লোন আম্পানে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগরের ৬ টি দুর্গত ইউনিয়নে বিতরণের আদেশ দিয়েছে সাতক্ষীরার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। গতকাল ৭ জুন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এই আদেশ প্রদান করেন। এ আদেশকে যুগান্তকারী এবং অনুকরণীয় উল্লেখ করে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডেইলি সাতক্ষীরাকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক এই গম ৬টি ইউনিয়নের দুর্গতদের মাঝে সমানভাবে বন্টন করবে।
সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরার সিনিয়র স্পেশাল জজ আালতের বিচারক শেখ মফিজুর রহমান ভার্চুয়াল শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একই সাথে এ মামলায় আটক কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্বনলতা শানপুকুর গ্রামের আব্দুল গফফারের ছেলে মনিরুজ্জামান, দেবহাটা উপজেলার আস্কারপুর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে মোজাহিদুল আলম মুকুল ও শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি পরানপুর গ্রামের উপেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে ইউপি সদস্য পবিত্র মন্ডলকে জেলখানা থেকে জেল সুপার আসামীদের ভার্চুয়ালি হাজির করলে বিচারক তাদের এই মামলায় গ্রেফতারসহ আসামীদের বিরুদ্ধে হাজতী পরোয়ানা ইস্যু করেন। এর আগে এ মামলার পিপি (দুদক) জব্দকৃত আলামত পচনশীল হওয়ায় উহার মদ্য থেকে ২/৩ কেজি নমুনা স্বরুপ রেখে বাকি সব আলামত বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করেন।
এ মামলার আদেশে আরো বলা হয়েছে, গত ২৮.০৫.২০২০ তারিখে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার এসআই হুসাইন মোঃ ইমদাদুল হক অত্র মামলায় ৮১৭ বস্তা গম (৪৭,৮৫০ কেজি) জব্দ তালিকা মুলে জব্দ করেন। রখাস্তে উল্লেখ করা হয় আলামত যেহেতু পচনশীল দ্রব্য সেহেতু তা নষ্ট না করিয়া জনকল্যানে ব্যবহার করা সমীচিন।
অতিসম্প্রতি সুপার সাইক্লোন আম্পান ঝড়ে সাতক্ষীরায়া দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে জবদকৃত আলামতের ব্যবহার/প্রয়োগ সুনিশ্চিত করতে ৫ কেজি নমুনা স্বরুপ রেখে বাকীগুলো আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গত এলাকা আশাশুনি উপলোর প্রতাপনগর ও শ্রীউলা এবং শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, কৈখালী, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মানুষের মাঝে বন্টনের লক্ষ্যে জেলা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ বর্ণিত ৬ টি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত জনগনের মাঝে বন্টন শেষে আদালতকে একটি বন্টন প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এভাবে অত্র ভিসি কেস নিষ্পত্তি করা হইল। একই আদেশের অনুলিপি অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা, দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, খুলনা ও পিপি দুদক বরাবর প্রেরণ করার জন্য বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে পাচার করা কাবিখা প্রকল্পের ৮১৭ বস্তা গম কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের সুলতানপুরের মেসার্স মনি মুক্তা রাইস মিলের গুদাম থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় ছয়জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মেসার্স মনিমুক্তা রাইস মিলের মালিক আব্দুল গফ্ফারের ছেলে মনিরুল ইসলাম মনি, মিলের ম্যানেজার দেবহাটার আশকারপুর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে মুজাহিদুল ইসলাম মুকুল ও শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পবিত্র মণ্ডল।
শ্যামনগর থেকে সরকারি গম পাচার করে কালিগঞ্জের একটি রাইস মিলে রাখা হয়েছে, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসাইনসহ সঙ্গীয় ফোর্স ২৭ মে বিকেলে উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের সুলতানপুর কলোনির মনিমুক্ত রাইস মিলের গোডাউনে অভিযান চালায়। এসময় সেখান থেকে সরকারি বস্তা ভর্তি ৮১৭ বস্তা গম জব্দ করে পুলিশ। এর বাজার মূল্য প্রায় ১৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বিপুল পরিমাণ এই গম উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার সকালে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার পরিদর্শক নীল কমল পাল কালিগঞ্জ থানায় আসেন।
তিনি সার্বিক বিষয়ে তদারকির পর গ্রেফতার তিনজনসহ ছয়জনের নামোল্লেখ করে এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাতপরিচয় দেখিয়ে দঃ বিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৮/৪৭১/ ৪৭৭(ক)/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একটি মামলা রুজু করেন। মামলা নং-১১ তারিখ ২৮.০৫.২০।
মামলাটি তিনি নিজেই তদন্তভার গ্রহণ পূর্বক পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, গম উদ্ধারের পরপরই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে মিল মালিকের ছেলে মনিরুজ্জামান মনি, মিলের ম্যানেজার মুকুলকে বুধবার রাতেই আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় বৃহস্পতিবার সকালে শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পবিত্র কুমার মণ্ডলকে তার নিজ বাড়ি পরানপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হওয়া বিপুল পরিমান এই গমের কাজ না করেই তা সংস্কার দেখিয়ে গম উত্তোলন করে বিক্রি করা হয় কালো বাজারে। এরপর ওই গম শ্যামনগর থেকে কালিগঞ্জের মনি মুক্ত রাইস মিলের গোডাউন ঘরে মজুদ রাখে।
অভিযোগ রয়েছে, জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলীর কাছ থেকে কালিগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল গফফার ৫০টন গম ক্রয় করেন।
তিনি জানান, আমি শ্যামনগরের মোহাম্মাদ আলীর কাছ থেকে ৪৯ টন ২শ কেজি বিভিন্ন ডিও লেটারের গম ক্রয় করেছি।
এদিকে, দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার পরিদর্শক নীল কমল পাল জানান, সরকারি গম কাজ না করেই আত্মসাত করার ঘটনার সামনে পেছনে যারাই আছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।