অনলাইন ডেস্ক : কাউকেই ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সচিব ড. সুলতান আহমেদ। রোববার (৫ জুলাই) দুপুরে ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে বিদ্যুৎ সচিব এ তথ্য জানান।
ড. সুলতান আহমেদ বলেন, কোনো গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কাউকেই ব্যবহারের অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে হবে না। যেসব অভিযোগ এসেছে তাদের বিল সমন্বয় করা হচ্ছে। আরও অভিযোগ এলে সেগুলোও সমন্বয় করা হবে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রতি মাসের বিল আলাদা না করে তিন মাসের বিল একসঙ্গে প্রস্তুত করায় অতিরিক্ত বিলের কারণে গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বিতরণ কোম্পানিগুলোর বেশ কয়েকটি সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র পূরণের জন্যই গ্রাহকদের অনেককে অতিরিক্ত এ বিলের মাশুল গুণতে হচ্ছে। এছাড়া রিডিং দেখে বিল না তৈরি করাও এর পেছনের অন্যতম কারণ।
করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরুর আগে গত ২২ মার্চ দেশব্যাপী বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়, মার্চ, এপ্রিল, মে তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল দিতে দেরি হলে কোনো জরিমানা গুণতে হবে না। এরপর আবার জুনে বলা হয়, ৩০ জুনের পর থেকে এই সুবিধা আর বাড়ানো হবে না। এমনকি এই সময়ের ভেতর বিদ্যুৎ বিল না দেওয়া হলে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার কথাও বলা হয়। এর মধ্যে মে মাসে অন্যায্যভাবে গ্রাহকরা ভূতুড়ে বিল পেতে শুরু করেন। আর এই অতিরিক্ত বিলের কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ।
সরকারি আইনানুযায়ী, বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে ছয়টি ধাপ রয়েছে। শূণ্য থেকে ৭৫ ইউনিটের মধ্যে প্রথম ধাপে গ্রাহকদের খরচ পড়ে ৪ দশমিক ১৯ টাকা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিটের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে খরচ পড়ে ৫ দশমিক ৭২ টাকা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিটের মধ্যে তৃতীয় ধাপে ৬ টাকা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের এ ধাপে ৬ দশমিক ৩৪ টাকা এবং ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের মধ্যে পঞ্চম ধাপে ৯ দশমিক ৯৪ টাকা, ৬০১ ইউনিটের ওপর অর্থাৎ ষষ্ঠ ধাপে ১১ দশমিক ৬৪ টাকা।
বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষকে, করোনাভাইরাসের কারণে সব বাড়িতে গিয়ে মিটার দেখতে না পারায় বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে একটি গড় হিসাব তুলে ধরতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু দেখা গেছে, বিতরণ কর্তৃপক্ষগুলো বিদ্যুতের বিলের গড় করেনি, বরং রিডিং, ব্যবহারের তুলনায় বেশি ধরায় গ্রাহকের বিদ্যুতের ইউনিট বেশি হয়ে গেছে। এ কারণেই এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল এসেছে।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ধানমন্ডির এক গ্রাহক জানান, গত মার্চে ৪১৩ ইউনিটের বিদ্যুতের জন্য ২ হাজার ৩৯২ টাকা বিল দিতে হয়েছে। এটি এপ্রিলে বেড়ে ৩ হাজার ৩৬১ টাকা হয়ে গেছে, যেখানে তিনি ব্যবহার করেছেন ৪৯৬ ইউনিট। মে মাসে ডিপিডিসি সঠিকভাবে রিডিং না নিয়েই বিল করেছে। বিল করার পর দেখা গেছে তাকে ১ হাজার ৮২ ইউনিটের ব্যবহারের হিসাব দেখাচ্ছে এবং বিল দেখাচ্ছে ১০ হাজার ৫৪৭ টাকা, যেটি কোনোভাবেই সঠিক নয়।
দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো নির্ধারিত এক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য দায়ী চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার ২৮৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিদ্যুতের গঠিত টাস্কফোর্স। এর আগে গত ২৫ জুন বিদ্যুৎ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্সকে সাত দিনের মধ্যে ভুতুড়ে বিলের ব্যাপারে সমাধান দিতে না পারলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি দেওয়ার কথা বলে।
জানা যায়, টাস্কফোর্স ঢাকা দক্ষিণ এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রকৌশলীসহ মোট চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া ৩৬ জন প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া এবং ১৩ মিটার রিডার সুপারভাইজারকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে। ঢাকা উত্তরের বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) দুজন মিটার রিডারকে বরখাস্তের সুপারিশ করেছে। রাজশাহী ও রংপুরের ১৬ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) দুজন মিটার রিডারকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শাও, বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি সমিতির কারা কারা ভুতুড়ে বিলের জন্য দায়ী এ ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য দেয়নি আরইবি। কোনো তথ্য দেয়নি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডও (পিডিবি)।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্সের কাছে এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুতের বিল দিতে গিয়ে সম্প্রতি অনেকে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের অতিরিক্ত বিল দিতে হয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছি। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থাও নিয়েছেন। আর যেসব কর্মকর্তার কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছি।