দেশের খবর : ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের জন্য আরও আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। এক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে অতিরিক্ত দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ এককালীন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। যুগ্ম সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকার এককালীন বিশেষ সম্মানী প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
বিশেষ সম্মানীর আওতায় শুধু করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরা এককালীন দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।
সম্মানী প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে
>> স্বাস্থ্য অধিদফতর বা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর, নিদির্ষ্ট ফরমে প্রাপ্ত আবেদনসমূহ যাচাই-বাছাইপূর্বক সম্মানীর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর নামের তালিকা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঠাবে।
>> স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তালিকা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাইপূর্বক অর্থ বিভাগের সম্মতিক্রমে সম্মানী প্রদানের সরকারি আদেশ জারি করবে।
>> সম্মানী বাবদ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুকূলে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
>> এ সম্মানী বর্তমান প্রচলিত অন্য যেকোনো প্রজ্ঞাপন বা আদেশে বর্ণিত সম্মানীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা বা অনুদানের অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এককালীন বিশেষ এ প্রণোদনা পেতে আবেদনে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম এবং আইডি নম্বর উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া পদবি, অফিস ও বেতন গ্রেড, মূল বেতন এবং এককালীন বিশেষ সম্মানীর পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় কোন হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ছিলেন তার নাম ও ঠিকানাও লিখতে হবে।
এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় সরাসরি নিয়োজিত ছিলেন মর্মে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রত্যয়ন আবেদেনর সাথে সংযুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি মূল বেতনের সপক্ষে চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার বা ডিএও বা ইউএও বা ডিসিএও এর প্রত্যয়ন সংযুক্ত করতে হবে।
এদিকে শুরু থেকেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ গ্রেডভেদে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মারা গেলে ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে গত ২৩ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরাসরি আর্থিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’
ওই পরিপত্রে আরও বলা হয়, ২০১৫ এর বেতন স্কেল অনুযায়ী, ১৫-২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন পাঁচ লাখ, মারা গেলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে সাত লাখ এবং মারা গেলে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রথম-নবম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ এবং মারা গেলে ৫০ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বীমার ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রিমিয়াম দিতে হবে। এছাড়া বীমার টাকা পেতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, ক্ষতিপূরণের আওতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত মাঠপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।
ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে
>> করোনাভাইরাস পজিটিভের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীসহ মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনাভাইরাস পজিটিভের প্রমাণ বা মেডিকেল রিপোর্টসহ নিজ নিজ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট ফরমে ক্ষতিপূরণের দাবিনামা পেশ করবেন।
>> করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরমে মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী/স্বামী/সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা/মা ক্ষতিপূরণের দাবি-সংবলিত আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করবেন।
>> আবেদনকারীর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রসমূহ যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে।
>> প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীরা কেবল এ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।
>> করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সৃজনকৃত খাতে করোনা (কোভিচ-১৯) সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ বরাদ্দকৃত অর্থ হতে নির্বাহ করা হবে। অর্থ বিভাগ ক্ষতিপূরণের আবেদনপ্রাপ্তির পর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সরকারি আদেশ জারি করবে।
>> এ ক্ষতিপূরণ বর্তমান প্রচলিত অন্য যেকোনো প্রজ্ঞাপন/আদেশে বর্ণিত কর্মকালীন মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা বা অনুদানের অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল হতে এ পরিপত্রের নির্দেশনা কার্যকর হবে।
আজকের পরিপত্র অনুযায়ী অতিরিক্ত দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ এককালীন বিশেষ সম্মানী শুধু করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন এমন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পাবেন। এদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালুর কথাও ভাবছে সরকার।