নিজস্ব প্রতিবেদক : বাবার কেনা জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে চরম দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন খুলনার কয়রা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মো. শামস উদ্দিন বাবু সানা। শুধু তাই নয়, তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হয়েছেন। একদিকে নিজ জমি দখলমুক্ত না করতে পারা ও অন্যদিকে পুলিশের হুমকিত আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাবু সানা। তিনি তাঁর পৈত্রিক ক্রয় করা জমি দখলমুক্ত ও লাঞ্ছণাকারী পুলিশের বিচার দাবি করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ূন কবির বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মো. শামস উদ্দিন বাবু সানা বলেন, তাঁর প্রয়াত বাবা গাউস আলী সানা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি স্বাস্থ্যদপ্তরে কর্মরত ছিলেন। তিনি (পিতা) তাঁর জীবন দশায় কয়রা উপজেলার মৌজা: গিলাবাড়ী, এস,এ খতিয়ান নং-৪৭,৪৮, এস এ দাগ নং-১৪,১৫, বিআরএসএ খতিয়ান নং ৮৬, বিআরএসএ দাগ নং ১১১, ১১৮, মোট ০.৬৬ একর জমি ক্রয় করেন। যার মধ্যে বর্তমানে ০.১২ একর জমি বেদখল অবস্থায় রয়েছে। একই এলাকার মৃত ফটিক গাজীর ছেলে মো. আব্দুল মজিদ গাজী (৫৫) মৃত আব্দুস সাত্তার গাজীর স্ত্রী আসিয়া খাতুনের (৬০) কাছে জমি ক্রয়সূত্রে তাদের ওই জমি দখল করে আছে। গত ২ জুলাই এ নিয়ে স্থানীয় সালিস বৈঠকে আমিন দিয়ে জমি মাপা ও স্কেচ ম্যাপ করে বিষয়টির সত্যতা মেলে। কিন্তু আব্দুল মজিদ কারো কথাই শুনছেন না।
বাবু সানা আরও বলেন, এ অবস্থায় আমি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য গত ৬ আগস্ট কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর অভিযোগ দাখিল করি। তিনি আমাদের উভয়পক্ষকে থানায় নিয়ে ৭ দিনের মধ্যে জমি মেপে উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি নিজেদের জমির সীমা নির্ধারণ না করতে বলেন। গত ৫ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে আমি ব্যবসার কাজে বাইরে গেলে জানতে পারি প্রতিপক্ষরা আমার জমি ঘেরা দিচ্ছে। বাড়ি এসে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে প্রতিপক্ষরা কয়রা থানার ওসির নির্দেশে এ কাজ করছে বলে জানায়। আমি বেলা দেড়টার দিকে আমার বাক্তিগত মোবাইল নম্বর থেকে কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল হোসেন (বিপি নং ৬৮৯৩০০৮১৩৬) এর মোবাইল নম্বরে ফোন করে পরিচয় দিয়ে বিষয়টি জানাই। তিনি ফোন রিসিভ করেই আমার সাথে আক্রমনাত্মক ব্যবহার শুরু করেন। তিনি (ওসি) আমার মৃত পিতা-মাতাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। ওসি’র সাথে বাবা সানার ফোন রেকর্ড কালের কণ্ঠের হাতে রয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, ওসি রবিউল একই দিন ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে তার সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স নিয়ে আমার বাড়ির সামনে আসেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কে বলেছে যে আমি ঘের দিতে হুকুম দিয়েছি? আমি তখন বলি যে, আনোয়ারা বেগম এ কথা বলেছেন। ওসি সাহেব তখন আমার মুখে স্বজোরে ঘুঁষি মারেন। আমি মাটিতে পড়ে গেলে তিনি তাঁর বুটজুতা দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাথি মারেন এবং এক পর্যায় আমার বুকের পারাতে থাকেন। এতে আমি মারাত্মকভাবে আহত হই। ওসি সাহেব আমাকে বলেন, ‘তোকে জীবনের মতো জমির স্বাদ মিটিয়ে দেব। তোকেসহ তোর ভাইদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাওয়াবো। আমার নাম ওসি রবিউল হোসেন। আমি ভবিষ্যতে কয়রা থেকে চলে যাব, তবে তুই সারাজীবন আমার কথা মনে রাখবি…এর পর গালিগালাজ। ওসি জোরপূর্বক চারটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর আমার নেন।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বাবু সানা বলেন, ‘আমার বাবা কেন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন জানি না। আজ আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। পাকিস্তানী কায়দায় নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছি। পৈত্রিক সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল হচ্ছে। আমি আমারা বাবার জমি ফেরত ও নির্মম নির্যাতনের বিচার চাই।
কয়রা থানার ওসি মো. রবিউল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বিতর্কিত জমিতে কোনো ঘের দেয়া নেই। গিলাবাড়ির অভিযোগকারী দীর্ঘদিন বিরক্ত করে আসছে। তাই একটু বকাঝকা করেছি। সে ভালো মানুষ নয়। তবে বিষয়টি যেভাবে বলা হয়েছে তা নয়।