অনলাইন ডেস্ক : ১৮ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন ধর্ম নিয়ে কটূক্তির কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকার। তার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে কয়েকদিন ধরে তোলপাড় হচ্ছে, সেই তিথি সরকার বিপদ এড়াতে নিজেই আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণ নাটক সাজিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে সিআইডি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিথি সরকারকে গ্রেপ্তারের পরদিন বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে সংস্থাটির সাইবার পুলিশ সেন্টারের ডিআইজি জামিল আহমদ এই কথা বলেন।
এর আগে তিথি সরকারকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় বুধবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে নরসিংদীর মাধবদীর পাঁচদোনায় স্বামীর এক দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়র বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।
তিথির বিরুদ্ধে ফেইসবুকে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে ২৪ অক্টোবর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। সেখানে ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, আহলে হাদিসের মতো ধর্মভিত্তিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিল ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের কর্মীরাও। তাদের দাবির মুখে ২৭ অক্টোবর ওই তিথিকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পল্লবী থানার উদ্দেশ্যে মিরপুরের বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি এই তরুণী। এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
ডিআইজি জামিল আহমদ বলেন, গত ২৫ অক্টোবর মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বেরিয়ে তিথি প্রেমিক শিপলু মল্লিকের সঙ্গে বাগেরহাটে গিয়ে বিয়ে করেন। এরপর তারা ৯ নভেম্বর ঢাকায় ফিরে আসেন। পরে নরসিংদীর এক বাড়িতে আত্মগোপন করেন। তিথি সরকার আত্মগোপনে থেকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল এভাবে আত্মগোপনে থেকে নিজেকে লুকিয়ে অপহরণের দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে রেহাই পাবেন বা ঘটনা অন্যদিকে ধাবিত হবে।
গত অক্টোবরের শেষদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে বলা হয়- সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ের চারতলা থেকে তিথি সরকারকে ‘হাত পা-বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে’।
সেই পোস্টটি মিথ্যা ও সিআইডিতে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানান ডিআইজি জামিল আহমদ।
তিনি বলেন, এটি একটি গুজব। ইতোমধ্যে নিরঞ্জন বড়াল নামে গুজব রটনাকারীকে রামপুরার বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিরঞ্জনসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত ২ নভেম্বর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
গত ১৬ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিথির ফেসবুক পেজ থেকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দেয়া হয়।
৫ নভেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে তিথি সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আবু মুসা রিফাত নামের এক ব্যক্তি।
এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিথি।
“তিথি সরকার স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থেকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল এভাবে আত্মগোপনে থেকে নিজেকে লুকিয়ে অপহরণের দায়ভার অন্যর ওপর চাপিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে রেহাই পাবেন বা ঘটনা অন্যদিকে ধাবিত হবে।”
তিথিকে গ্রেপ্তারের আগে তার স্বামী শিপলু মল্লিককে বুধবার বেলা পৌনে ১২ টার দিকে রাজধানীর কাপ্তানবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগে আরেকটি মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জামিল আহমদ।
‘তিথি সরকারকে এই কর্মকাণ্ডে তার পরিবার এবং অন্য কেউ সহযোগিতা করেছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
মামলায় অভিযোগ করা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিথি সরকার গত ১৬ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কটূক্তি করেছেন।
অভিযোগে আরও জানানো হয়, ইতোমধ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কারণে তিথিকে তার সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই অভিযোগে গত ২৬ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত আদেশে তিথি সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
সংবাদ সম্মলনে সিআইডির সাইবার পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান, সাইবার ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ, সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনস কর্মকর্তা এস এম আশরাফুল আলম উপস্থিত ছিলেন।