অনলাইন ডেস্ক : ইনিংসের শুরু থেকে কোনোভাবেই ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না আরিফুল হক। একপর্যায়ে ২০ বলে মাত্র ১১ রান ছিল তার সংগ্রহ। তখন হয়তো কেউ ভাবেওনি শেষপর্যন্ত তার ব্যাটে ম্যাচ জিতবে জেমকন খুলনা। কিন্তু হয়েছে তাই। ম্যাচের শেষ ওভারে পাঁচ বলে চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে খুলনাকে জয় এনে দিয়েছেন আরিফুল।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৫২ রানের বেশি করতে পারেনি ফরচুন বরিশাল। জবাবে খুলনার ব্যাটিংও খুব একটা ভাল ছিল না। একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলছিলেন আরিফুল। শেষ ওভারে তাদের বাকি থাকে ২২ রান। মেহেদি হাসান মিরাজের করা সেই ওভারের পাঁচ বলেই চার ছক্কার মারে ২৪ রান তুলে নেন আরিফুল।
জিরো থেকে হিরো হওয়া আরিফুল খেলেছেন ৩৪ বলে ৪৮ রানের অনবদ্য ইনিংস। প্রথম ২০ বলে ১১ থেকে শেষের ১৪ বলে আরও ৩৭ রান করেছেন ডানহাতি এ মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। তার বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়েই বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শুভসূচনা করল তারকাখচিত দল জেমকন খুলনা।
রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই তাসকিন আহমেদের আগুনের বোলিংয়ের সামনে পড়ে খুলনা। দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় (৩ বলে ৪) ও ইমরুল কায়েস (২ বলে ০) ফিরে যান প্রথম ওভারেই। প্রথম পাওয়ার প্লে’তে আউট হন দলের দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১৬ বলে ১৭) ও সাকিব আল হাসান (১৩ বলে ১৫)।
পাওয়ার প্লে’র মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে অকূল পাথারে পড়ে যায় খুলনা। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেটে ৪৪ রান যোগ করেন আরিফুল হক ও জহুরুল ইসলাম। দলীয় ৭৮ রানের মাথায় ২৬ বলে ৩১ রান করে ফেরেন জহুরুল। পরে সাহসী ব্যাটিং করেন শামীম হোসেন। হাত খুলে খেলে ৩ চার ও ১ ছয়ের মারে ১৮ বলে করেন ২৬ রান।
তবু তা যথেষ্ঠ ছিল না খুলনার জয়ের জন্য। দুই ওভারে জয়ের জন্য বাকি ছিল ২৯ রান। তাসকিনের করা ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে শহীদুল ইসলামকে স্ট্রাইক দেন আরিফুল। চার বল ডট খেলে শেষ বলে ছক্কা মারেন শহীদুল। ফলে শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ২২ রান। হাতে আর কোন বোলার না থাকায় মেহেদি মিরাজকে বোলিংয়ে ডাকেন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
আর এতেই হয় সর্বনাশ। মিরাজের প্রথম বলে লং অফ, দ্বিতীয় বলে স্ট্রেইট ছক্কা মেরে সমীকরণ ৪ বলে ১০ রানে নামিয়ে আনেন আরিফুল। তৃতীয় বলে এক রান হওয়ার সুযোগ থাকলেও সেটি নেননি তিনি। কেননা তার মাথায় ছিল ছক্কার মারে ম্যাচ শেষ করার পরিকল্পনা। ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বীরত্বের সাথেই তা করেন আরিফুল।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই মেহেদি হাসান মিরাজের উইকেট হারায় বরিশাল। শফিউলের লেগস্টাম্প লাইনের ডেলিভারি লেগসাইডে ঠেলতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন মিরাজ, ফিরতি ক্যাচ লুফে নিয়ে তার বিদায়ঘণ্টা বাজান শফিউল। সেই যে শুরু হয় বরিশালের পতন, তা আর ঠেকাতে পারেননি পরের ব্যাটসম্যানরা। তবে ভালো শুরু করেছিলেন বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান।
মিরাজ প্রথম বলে ফিরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বলেই উইকেটে আসেন পারভেজ হোসেন ইমন। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন ইমন। অন্যপ্রান্তে সতর্ক সাবধানী ছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। যদিও বেশিদূর যেতে পারেননি বরিশাল অধিনায়ক। প্রথম পাওয়ার প্লে’র শেষ বলে মিডঅফে ইমরুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ১৫ বলে ১৫ রান করা তামিম।
হতাশ করেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। দীর্ঘ ৪০৯ দিন পরে ম্যাচে ফেরা সাকিব আল হাসানের লেগস্টাম্পের বাইরের এক ডেলিভারি সজোরে হাঁকিয়ে সীমানা ছাড়া করতে পারেননি আফিফ, ধরা পড়ে যান ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো জহুরুল অমির হাতে। আউট হওয়ার আগে ৩ বলে করেন ২ রান। আফিফ ফিরে গেলেও অপরপ্রান্তে অবিচল ছিলেন বিশ্বজয়ী যুবাদলের ওপেনার পারভেজ ইমন।
চতুর্থ উইকেটে পারভেজ ইমন ও তৌহিদ হৃদয় যোগ করেন ৩২ রান। দলীয় ৮১ রানের সময় সাজঘরে ফেরেন ইমন। যেখানে তার একার সংগ্রহই ছিল ৫১ রান; ৪১ বলের ইনিংসটিতে ২ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি এ ওপেনার। বরিশালের পরেরটুকু টেনে নেন তৌহিদ হৃদয়, মাহিদুল অঙ্কনরা। প্রেসিডেন্টস কাপের হিরো ইরফান শুক্কুর আউট হন ১১ বলে ১১ রান করে।
তবে মিনি ঝড় তোলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, তিন ছয়ের মারে ১০ বলে খেলেন ২১ রানের ক্যামিও ইনিংস। আরেকপ্রান্ত আগলে রাখা তৌহিদের ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ২৭ রান। ইনিংসের ১৯তম ওভারে চার বলের ব্যবধানে আমিনুল বিপ্লব, তৌহিদ হৃদয় ও সুমন খানকে ফেরান শহীদুল। তখন মনে হচ্ছিল দেড়শও হবে না বরিশালের সংগ্রহ।
কিন্তু শেষ ওভারে ব্যাট হাতে চমক দেখান তাসকিন আহমেদ। একটি করে চার ও ছয় হাঁকিয়ে ৫ বলে করেন ১২ রান। যা বরিশালকে এনে দেয় ১৫২ রানের লড়াকু সংগ্রহ।
খুলনার পক্ষে বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন শহীদুল। এছাড়া ২টি করে উইকেট গেছে শফিউল ইসলাম ও হাসান মাহমুদের ঝুলিতে। দীর্ঘদিন পর ফেরা সাকিব ৩ ওভারে ১৮ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ১টি উইকেট।