কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা ব্যুরো: বিলুপ্তির দ্বারে কালের স্বাক্ষী মাটি ও বাঁশের তৈরী ধানের গোলা। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কিছু কিছু গ্রামে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাটি ও বাঁশ দিয়ে তৈরি ধানের গোলা। এসব অঞ্চলের মানুষের এক সময় গোলাভরা ধান ও পুকুরভরা মাছ ছিল কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে এখন ওইসব ঐতিহ্যের সবকিছুই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এ প্রজন্মের মানুষের কাছে পূর্বেকার ওইসব রীতিনীতি যেন এখন রূপকথার গল্প কাহিনীর মতো। বর্তমানে ধান চাষের জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আশায় এখন আর কৃষক বা চাষিদের গোলাভর্তি ধান ঘরে ওঠে না। নেই আগের মতো গোলার ব্যবহার। সবই যেন বিলুপ্ত হতে চলেছে। সেইসঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ধানসহ শস্য রাখা গোলার ব্যবহার। শত বছর আগের তৈরি ধানের গোলা কিছু কিছু কৃষকের বাড়ির সামনে আজও কালের সাক্ষ্য দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দেবহাটার সুভিন্দু বলেন, বাপ-দাদার তৈরি এই গোলাগুলো স্মৃতি হিসেবে রাখা হয়েছে। ধানসহ বিভিন্ন শস্য রাখা গোলা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ধান সংরক্ষণ করা গোলার আবহমান রীতি। এখন শুধু পূর্বপুরুষের তৈরি করা অল্পসংখ্যক গোলা ছাড়া নতুন কোনো শস্য মজুদ রাখার গোলা আর চোখে পড়ে না। যুগেরও পরিবর্তন ঘটেছে। পূর্বপুরুষদের মতো এখন আর গোলার প্রয়োজন হয় না। আগে গ্রামের মানুষদের ধান মাড়াই করে গোলায় তোলার যে আনন্দ ছিল, এখন আর তার দেখাই মেলে না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে যেতে বসেছে।
এবিষয়ে সাতক্ষিরা জেলার দেবহাটা উপজেলার কোড়া গ্রামের কৃষক আকবার আলি বলেন, বাপ ও দাদার কাছে শুনেছি- সেই আমলে রাস্তাঘাটের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। গরুর গাড়ি ছাড়া মানুষের চলাচলসহ ধান বিক্রির কোনো বিকল্প পথ ছিল না। বাজারগুলোও ছিল দূরে। তাই ধান গোলাতেই রাখা হতো দীর্ঘসময়। তার পর সুবিধামতো সময়ে বিক্রি করা হতো। বর্তমানে রাস্তাঘাট উন্নত, সেইসঙ্গে আশপাশে গড়ে উঠেছে ধান বেচা-কেনার আড়ত। নানা কারণে ভাগ বাটোয়ারা হয়ে কমে গেছে ব্যক্তিমালিকানা জমির পরিমাণ। তাই সময়ের প্রয়োজনে ধান গোলাতে তোলার আগেই বিক্রি করে দিতে হয়। তাই ধানের গোলাগুলো এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।