অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর কলাবাগানে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনের বয়স নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আনুশকার বাবা-মা অভিযোগ করেছেন, মেয়ের বয়স নিয়ে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বিড়ম্বনায় ফেলেছে। পাসপোর্ট ও জন্মসনদ অনুযায়ী আনুশকার বয়স ১৭। মামলা দুর্বল করতে বয়স ১৯ লেখা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো- বয়স ১৯ করা গেলেই কি মুক্তি মিলবে ইফতেখার ফারদিন দিহানের? না বয়স ১৯ হলেও সর্বোচ্চ শাস্তিই ভোগ করতে হবে ধর্ষককে?
আনুশকারের বয়স জটিলতার বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, বয়স নির্ধারণের জন্য আমরা এক্স-রে বিভাগে পাঠিয়েছি। শুক্রবার এই বিভাগ বন্ধ থাকায় পুলিশ জানিয়েছে সেটা করতে পারেনি। যেহেতু এক্স-রে হয়নি তাই তার বডির (শরীর) গঠন দেখে, দাঁত দেখে এবং তার যে ডকুমেন্ট আছে সেগুলো দেখে আমরা একটা বয়স নির্ধারণ করতে পারবো। এখানে একটা ক্যালকুলেশনের ব্যাপার আছে। এখনই আমরা এ বিষয়ে বলবো না।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাজ হলো তার প্রকৃত বয়সটা বের করা। যেহেতু আমরা এক্স-রে করতে পারিনি, তাই কিছু মাইলফলক আছে সেগুলো দেখে, তার ডকুমেন্টগুলো নিয়ে আমরা একটা বয়স বলতে পারবো।
আনুশকার সহপাঠী মাস্টারমাইন্ড স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী নেহা জামান জানান, পাসপোর্টসহ সব জায়গায় বয়স ১৭ বছর উল্লেখ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ১৯ বছর নির্ধারণ করা অনৈতিক। এছাড়া দিহানের বয়স ২১ হলেও মামলার কার্যক্রমে তার বয়স কম দেখানো হয়েছে। এতে করে তার ছাড় পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) আটক প্রধান অভিযুক্ত দিহান (১৮) আনুশকাকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে পুলিশকে জানায়, ধর্ষণের পরিকল্পনা আগেই করা ছিলো। বন্ধু হলেও দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক বেশিদিন হয়নি। মাত্র তিন মাস হলো তাদের মধ্যে সম্পর্ক বয়স। গ্রুপ স্টাডির নাম করে আনুশকাকে ফোন করে কলাবাগান লেক সার্কাসের একটি বাসায় ডেকে নেয় সে। দুপুর ১২টা থেকে একটার মধ্যে আনুশকাকে ধর্ষণ করে দিহান।
দুপুর ১টার দিকে আনুশকার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর তাকে ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ওইদিন চারজনকে আটক করে পুলিশ। ধর্ষণকারী একজন নাকি চারজন? জানতে চাইলে কলাবাগান থানা পুলিশ জানায়, দিহান জানিয়েছে সে একাই ধর্ষণ করেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে খবর পেয়ে বাকিরা এসেছে।
ঘটনার দিন রাতেই রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেছেন আনুশকার বাবা আল আমিন আহমেদ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ২ ধারায় দায়েরকৃত মামলার একমাত্র আসামি দিহান। ৯ এর ১ ধারায় ভুক্তভোগীর বয়সের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও ২ ধারায় ভুক্তভোগীর বয়সের কোনো বিষয় উল্লেখ নেই।
কলাবাগান থানার ওসি/তদন্ত আ স ম আসাদুজ্জামান বলেন, মেয়েটাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখন চিকিৎসকের রেজিস্ট্রারে ১৯ বছর লেখা ছিলো। সুরতহাল প্রতিবেদন লেখার সময় হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেট দেখেই বয়স ১৯ লেখা হয়েছে। এরপরেও পুলিশের পক্ষ থেকে প্রকৃত বয়স নির্ধারণের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা দেয়নি পুলিশ। এটা প্রাথমিক বয়সের রিপোর্ট। মেডিকেল থেকে বয়স নির্ধারিত হওয়ার পর তদন্তে আমরা বয়স ঠিক করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউ মার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান বলেন, বয়স নিয়ে কনফিউশানের কিছু নেই। এটা আমাদের সিনিয়র স্যাররা ক্লিয়ার করবেন। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় হাসপাতালের প্রাপ্ত তথ্য এবং ভিকটিমের নিকট আত্মীয়ের উপস্থিতি থেকে যে তথ্য পেয়েছি সেটাই সুরতহালে উপস্থাপন করেছি। মামলার ভিকটিমের পরিবার যে বয়সের (১৭) কথা বলেছে তা আমরা সন্নিবেশ করেছি। এরপরেও প্রকৃত বয়স নির্ধারণের জন্য চিকিৎসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পরে তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।
মামলার একমাত্র আসামি ও লেভেল পড়ুয়া শিক্ষার্থী দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়েছে। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছেন।
হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।