বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে যেমন দারুণ শুরু, বোলিংয়েও তেমন। কিন্তু শেষটা ভালো হয়নি। যে কারণে তিন ফিফটিতেও বাংলাদেশ করে ৯ উইকেটে ২৫৭ রান। আবার বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের নিয়ন্ত্রিত পারফরম্যান্সে ভালো কিছুর আশা জাগিয়েছিল তারা। তবে সেখানেও ছেদ টানে নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে জেমস নিশাম ও নেইল ব্রুম শক্ত হাতে বাংলাদেশের সামনে প্রতিরোধ গড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অল্প পুঁজির স্কোরটা কিউইরা পার করতে পেরেছে স্বাচ্ছন্দ্যে। ১৫ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪৭.৩ ওভারে ৬ উইকেটে ২৫৮ রান করে ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা দ্বিতীয় জয় পেল নিউজিল্যান্ড। টানা ২ ম্যাচ জিতে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে তারা। আর ২ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে বাংলাদেশ। সমান পয়েন্টে তিন দলের মধ্যে শেষে আয়ারল্যান্ড। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছিল বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। মাশরাফিদের পরের খেলা আগামী শুক্রবার, প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড।
বুধবার নিউজিল্যান্ডকে আড়াইশর উপর রানের টার্গেট দিয়ে প্রথম উইকেট তুলে নিতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে সপ্তম ওভারের শেষ বল পর্যন্ত। মুস্তাফিজুর রহমানের স্লোয়ারে সামনের দিকে বল মারতে চাইলেন লুক রঞ্চি। বল আকাশে উঠে মিডঅফে ধরা পড়ল মাহমুদউল্লাহর হাতে। ৩৯ রানে নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে।
টম ল্যাথামের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে বেশ সতর্ক ব্যাটিং করছিলেন রঞ্চি, বিশেষ করে মুস্তাফিজের ওভারে। বাঁহাতি পেসারের প্রথম ওভারে ২ রান পায় নিউজিল্যান্ড। আর দ্বিতীয় ওভারেই মুস্তাফিজের শিকার হন রঞ্চি। ২৭ বলে ২৭ রান করেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ৪টি চার ও ১টি ছয় ছিল তার ইনিংসে।
এরপর ল্যাথামের সঙ্গে শক্ত জুটি গড়তে ব্যর্থ হন জর্জ ওয়ার্কার। ল্যাথাম ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভাঙে ৪১ রানের জুটিটি। মোসাদ্দেক হোসেনের বলে অফসাইডে শট নেওয়ার পর দৌড়ে একটি রান নিতে চেয়েছিলেন কিউই ওপেনার। কিন্তু ননস্ট্রাইকিং থেকে ওয়ার্কার এসে পৌঁছানোর আগেই সাব্বির হোসেনের থ্রোতে মুশফিকুর রহিম বল লাগান স্ট্যাম্পে। টিভি আম্পায়ার দেন আউটের সিদ্ধান্ত। ২৪ বলে ১ ছয়ে ১৭ রান করেছিলেন ওয়ার্কার।
ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে ছিলেন ল্যাথাম। নিজের অবস্থানটা বেশ শক্ত করছিলেন। তবে তাকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশের স্বস্তি ফেরান রুবেল হোসেন। ৫৪ রানে নিউজিল্যান্ডের এ ওপেনারের ব্যাটে বল লেগে চলে যায় মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। নেইল ব্রুমের সঙ্গে শক্ত জুটি গড়ার আভাস দেওয়া টেলরও ২৫ রানে মুস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার হন।
১৪৭ রানে নিউজিল্যান্ড চতুর্থ উইকেট তুলে নিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ব্রুম ও নিশাম ১২.৩ ওভারে ৮০ রানের সতর্ক জুটি গড়েন। দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়ার পণ যেন তারা করেছিলেন। কিন্তু রুবেলের বলে ২ রানের আক্ষেপ নিয়ে এলবিডব্লিউ হন ব্রুম (৪৮)। তাতে সমস্যা হয়নি কিউইদের।
বল হাতে খরুচে মাশরাফি শেষদিকে এসে উইকেট পান। প্রথম ৫ ওভারে ৪৮ রান দেওয়া অধিনায়ক নিজের ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সেরা ইনিংসের মালিক নিশামকে ৫২ রানে আউট করেন তিনি। দুই ওভার ৩ বল বাকি থাকতে মাশরাফির ওভারেই জয়সূচক রান নেন কলিন মুনরো। ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। অপর প্রান্তে ৫ রানে খেলছিলেন মিচেল স্যান্টনার।
৯ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফল বোলার মুস্তাফিজ। সমান উইকেট পেয়েছেন রুবেল, ১০ ওভারে ৫৩ রান দেন তিনি।
এর আগে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে করে ২৫৭ রান। সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর হাফসেঞ্চুরির পরও খুব একটা আহামরি স্কোরবোর্ড তৈরি করতে পারেনি মাশরাফি মুর্তজার দল।
সৌম্যর ব্যাটে এসেছে ইনিংস সেরা ৬১ রান। মুশফিক করেন ৫৫ ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে আসে ৫১ রান। এছাড়া দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছান কেবল তামিম ইকবাল (২৩) ও মোসাদ্দেক হোসেন (৪১)। দলীয় স্কোরবোর্ড হতে পারত আরও মজবুত। কিন্তু শেষ ওভারেই হামিশ বেনেটের বলে বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট।
কিউইদের সবচেয়ে সফল বোলার বেনেট ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন ইশ সোধি ও জেমস নিশাম।
ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচেও টসে হেরেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচেও শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তামিম-সৌমরা। যদিও বৃষ্টির কারণে নিজেদের ইনিংসই শেষ করতে পারেনি টাইগাররা। ম্যাচটি তাই পরিত্যক্ত হয়। ওই ম্যাচে একাদশে ছিলেন না নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি। এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে অবশ্য তিনি ফিরেছেন কিউইদের বিপক্ষে।
মাশরাফি ফেরায় একাদশে একটি পরিবর্তন ছিল নিশ্চিত। অধিনায়ক ফিরে আসায় কপাল পুড়েছে পেসার তাসকিন আহমেদের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের একাদশে বদল এই একটিই। কিউইদের একাদশেও এসেছে একটি পরিবর্তন। অলরাউন্ডার স্কট কুগেলিনের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন বেনেট।