খেলার খবর : টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সব ফ্লেভার যোগ করলে সেই যোগফল কী দাঁড়াবে? অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর শ্রীলঙ্কার প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি দেখে থাকলে তেমন অনুভুতিই হওয়ার কথা যে কারো। কী ছিল না এতে, বোলারদের কৃপণতা, হ্যাটট্রিক, একের পর এক ছক্কা। শ্বাসরূদ্ধকর একটি ম্যাচ। লো স্কোরিং ম্যাচ হওয়া সত্ত্বেও একটি আদর্শ টি-টোয়েন্টি ম্যাচই যেন বুধবার রাতে দেখলো ক্রিকেট সমর্থকরা।
বল হাতে শ্রীলঙ্কাকে ১৩১ রানে বেধে ফেলার পর স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য জয়টা ছিল যেন ডালভাত। লেন্ডল সিমন্স আর এভিন লুইস শুরুটাও করেছিলেন সেভাবে। কিন্তু হঠাৎ করেই লঙ্কান স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার টানা তিনটি অবিশ্বাস্য ঘূর্ণি বল। টি-টোয়েন্টিতে হয়ে গেলো ১৪তম হ্যাটট্রিক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারে তিনজন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়েছে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকটি পূরণ করে ফেলেন তিনি।
কিন্তু আকিলা ধনঞ্জয়া কী জানতেন, ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়! তার হ্যাটট্রিকের জবাব ক্যারিবীয় অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড কিভাবে দেবেন, সেটা যদি তিনি জানতেন, তাহলে হয়তো আর বলই হাতে তুলে নিতেন না।
ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওভারটি করতে আসেন আকিলা ধনঞ্জয়া। আগের ওভারেই হ্যাটট্রিকটি গড়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের পরের ওভারেই পোলার্ডের নির্দয় তাণ্ডবের মুখোমুখি হলেন। ওভারের ৬টি বলেই ৬টি ছক্কা। টানা ৬ ছক্কা মেরে এক ওভারেই পোলার্ড নিয়ে নিলেন ৩৬ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হার্শেল গিবস আর যুবরাজ সিংয়ের পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এক ওভারে টানা ৬টি ছক্কার মার মারলেন পোলার্ড।
সে সঙ্গে পাওয়ার প্লেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলে নিলো ৯৮ রান। যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে রেকর্ড। পাওয়ার প্লেতে এখনও পর্যন্ত কোনো দল এতগুলো রান একসঙ্গে নিতে পারেনি। সুতরাং, শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় হলো ৪ উইকেটের ব্যবধানে, ৪১ বল হাতে রেখে।
টি-টোয়েন্টিতে খেলতে নামলেই কেন যেন ক্যারিবীয়দের শরীরে অন্যরকম একটা জোস চলে আসে। তারওপর, ক্রিস গেইলদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন পূর্ণ শক্তির একটি দল। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই এই ফরম্যাটে পূর্ণ শক্তির দল গড়ার দিকেই নজর ক্যারিবীয়দের।
তারই অংশ হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন নিজেদের মাঠে খেলছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অ্যান্টিগার কোলিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম ম্যাচেই সফরকারী লঙ্কানদের রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে কৃপণতার পরিচয় দিয়ে ব্যাট হাতে টর্নেডো বইয়েছে তারা।
শ্রীলঙ্কার করা ১৩১ রানের জবাব দিতে নেমে দুই ওপেনার লেন্ডল সিমন্স এবং এভিন লুইস ঝড়ো সূচনা এনে দেন। ৩.২ ওভারে ৫২ রানের জুটি গড়ে তারা বিচ্ছিন্ন হন। ১০ বলে ২৮ রান করে আউট হন এভিন লুইস। ২টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কার মার মারেন ৩টি।
এরপরই আকিলা ধনঞ্জয়ার হ্যাটট্রিক। টানা তিন বলে আউট হলেন এভিন লুইস, ক্রিস গেইল এবং নিকোলাস পুরান। লুইস গুনাথিলাকার হাতে ক্যাচ দেন। ক্রিস গেইল হলেন এলবিডব্লিউ এবং পুরান ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে ডিকভেলার হাতে।
এরপরের মিডল অর্ডারে তাণ্ডবলীলা চালান অধিনায়ক পোলার্ড। ১১ বলে তিনি ৩৮ রান করে আউট হন। কোনো বাউন্ডারির মার নেই। মেরেছেন এক ওভারে ছয়টি ছক্কা। দুটি সিঙ্গেলস নেয়ার পর ওয়ানিদু হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান সাজঘরে।
ফ্যাবিয়েন এলেন এসে পরের বলেই আউট হয়ে যান। আবারও তৈরি হয় হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। কিন্তু এবার হাসারাঙ্গাকে বঞ্চিত করেন ডোয়াইন ব্র্যাভো। হ্যাটট্রিকটা হতে দেননি। না হয়, এক ম্যাচে দুটি হ্যাটট্রিকে ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল রেকর্ড তৈরি হয়ে থাকতো।
ক্যারিবীয়দের টেস্ট অধিনায়ক জেসন হোল্ডার টি-টোয়েন্টিতে ফিরে নিজের মূল্য বোঝালেন। ২৪ বলে ২৯ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। ১টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কা মারেন ২টি। ব্র্যাভো অপরাজিত থাকেন ৪ রানে। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এবং ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা, দু’জনই নেন ৩টি করে উইকেট।
এর আগে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাট করতে পাঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাট করতে নেমে ক্যারিবীয় বোলারদের কৃপণতার মুখে রানই করতে পারেনি লঙ্কানরা। পাথুম নিশাঙ্কা সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন ৩৪ বল খেলে। নিরোশান ডিকভেলা ৩৩ রান করেন ২৯ বল খেলে। এছাড়া ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা করেন ১২ রান, দিনেশ চান্ডিমাল ১১ এবং অ্যাশেন বান্দ্রা করেন ১০ রান।
ক্যারিবীয় বোলারদের মধ্যে ওবেদ ম্যাকয় নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকটে নেন কেভিন সিনক্লেয়ার, ফিদেল এডওয়ার্ডস, জেসন হোল্ডার, ডোয়াইন ব্র্যাভো এবং ফ্যাবিয়েন অ্যালেন। ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে পোলার্ডের হাতে।