দীর্ঘ ৫ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো রিয়াল মাদ্রিদের। গত দুইবারের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনাকে হটিয়ে লা লিগার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করল জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা। লা লিগা বর্তমান মৌসুমের শেষদিন মালাগার বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতে ৩৩তম শিরোপার স্বাদ পেয়েছে তারা। একই দিন অ্যাইবারের বিপক্ষে লিওনেল মেসির জোড়া গোলে বার্সেলোনা ৪-২ গোলের ঘুরে দাঁড়ানো জয় পেয়েছে। কিন্তু ওই ৩ পয়েন্ট তাদের শিরোপা ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
৩৮ ম্যাচে ২৯ জয়, ৬ ড্র ও ৩ হারে ৯৩ পয়েন্ট নিয়ে লা লিগার রাজত্ব দখল করল রিয়াল। আর ৯০ পয়েন্টে মৌসুম শেষ করেছে বার্সা।
গতবারের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনার চেয়ে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে রবিবার মালাগার মাঠে নেমেছিল রিয়াল। শিরোপা জেতার জন্য হার এড়ানোই যথেষ্ট ছিল তাদের জন্য। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিনে তারা শুধু ড্রয়ের জন্য মাঠে নামেনি। শুরু থেকে বালাইদোসে ঝাপিয়ে পড়েছিল রিয়াল। ২ মিনিটে মালাগার ডিফেন্ডারের ভুলে গোলমুখ খোলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। আর ওই লক্ষ্যভেদী শটে মৌসুমের সব ম্যাচে গোলের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করে রিয়াল। হার্নান্দেজের বল বিপদমুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল চলে যায় ইস্কোর কাছে। মালাগার সাবেক এ তারকা বল দেন রোনালদোকে। স্বাগতিক গোলরক্ষক কামেনিকে বোকা বানিয়ে খালি জালে বল পাঠান পর্তুগিজ তারকা।
প্রথম গোল হজমের পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে মালাগা। ১৩ মিনিটে ফাঁকা জায়গা খুঁজে পেয়ে ডানপায়ে শট নেন রামিরেজ। ডানদিকে খানিকটা নিচু হয়ে তাকে হতাশ করেন কেইলর নাভাস। পরের মিনিটে মার্সেলোর ক্রসে সুযোগ পান করিম বেনজিমা। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার মিকেল হেড করে বল বাইরে পাঠান। ২১ মিনিটে রামিরেজের ফ্রিকিক দারুণভাবে ঠেকান নাভাস। রোনালদো দ্বিতীয় সুযোগ নষ্ট করেন ৩৪ মিনিটে। এমন আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে দুই দল আরও কয়েকটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি।
বিরতির পর পঞ্চম মিনিটে রামোসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে লক্ষ্যে শট নেন রেসিও। নাভাস প্রতিরোধ গড়লে সমতা ফেরাতে পারেনি মালাগা। স্বাগতিকরা যারপরনাই চেষ্টা করে গেছে গোলের, কিন্তু পারেনি। বরং ৫৫ মিনিটে রিয়াল পায় দ্বিতীয় গোল। ক্রুসের কর্নার থেকে বল পান সের্হিয়ো রামোস। কামেনি তাকে পরাভূত করলে বল রাফায়েল ভারানের বুকে লেগে যায় বেনজিমার পায়ে। মাত্র ২ গজ দূর থেকে মালাগার জালে বল জড়ান ফরাসি ফরোয়ার্ড।
শুরুতেই রিয়ালের গোলের সংবাদ হয়তো পৌঁছে গিয়েছিল ন্যু ক্যাম্পে। যেখানে বার্সেলোনা স্বাগত জানিয়েছিল অ্যাইবারকে। তারা রিয়ালের হারের জন্য প্রার্থণা করছিল। কিন্তু তাদের চাওয়া পূরণ হয়নি। বরং কাতালানরা হেরে মৌসুম শেষ করার আশঙ্কায় পড়েছিল। দুই অর্ধে ইনুই জোড়া গোল করলে বার্সা পিছিয়ে পড়ে ২-০ গোলে। ৬৩ মিনিটে জুনকার আত্মঘাতী গোল বার্সাকে ম্যাচে ফেরার পথ তৈরি করে দেয়। ৬৯ মিনিটে জর্দি আলাবার সৌজন্যে বিতর্কিত পেনাল্টি আদায় করে নেয় কাতালানরা। বিস্ময়করভাবে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন মেসি। গোলপোস্টের মাঝামাঝিতে শট নেন আর্জেন্টাইন তারকা, সহজেই বল উপর দিয়ে বাইরে পাঠান অ্যাইবার গোলরক্ষক ইয়োয়েল।
তবে ৪ মিনিট পর লুই সুয়ারেসের গোলে সমতায় ফেরে বার্সা। নেইমারের কর্নার থেকে অ্যালকাসেরের ফ্লিকে ব্যাকপোস্টের কাছ থেকে গোল করেন উরুগুয়ান স্ট্রাইকার। ২ মিনিটের ব্যবধানে বার্সা এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে কাজে লাগায়। নেইমারকে অ্যাইবারের ডিবক্সে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন অ্যান্ডার রদ্রিগেজ। প্রথম ব্যর্থতার পরও আবার পেনাল্টি শট নেন মেসি। তার ডানপায়ের নিচু শট এবারও লক্ষ্য ভেদে ব্যর্থ হতো। তবে বলে হাত লাগালেও ঠেকাতে পারেননি ইয়োয়েল। ৯২ মিনিটে মৌসুমে শেষবারের মতো ঝলক দেখান মেসি। মাঝমাঠ থেকে বল একাই টেনে নেন প্রতিপক্ষের বক্সে, এর পর পাঁচজনকে কাটিয়ে বাঁপ্রান্তে কোনাকুনি শট নিয়ে সফল হন আর্জেন্টাইন তারকা।